অ্যামনিওটিক স্যাক হল একটি থলের মত, এটি অ্যামনিওটিক তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে। এর মধ্যে শিশুটি আরাম করে থাকে। অ্যামনিওটিক তরল শিশুকে আকস্মিক নড়াচড়া থেকে রক্ষা করে। যে আঠাটি অ্যামনিওটিক থলি এবং জরায়ুকে একটি প্রোটিনের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে, তা ফাইব্রোনেক্টিন নামে পরিচিত। যদি এই আঠাটি অকেজো হয়ে যায়, তবে অ্যামনিওটিক থলি পৃথক হয়ে যেতে পারে। এই পৃথক হয়ে যাওয়া প্রত্যাশিত প্রসবের দিনের মধ্যে হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু যদি এটি আগে হয়ে যায়, এ অবস্থাটিকে চিকিৎসার পরিভাষায় প্রিটাইম লেবর বলা হয়। যদি প্রিটাইম লেবরের কোনো সম্ভাবনা থেকে থাকে, তবে হয়ত আপনার সার্ভিক্সে ফাইব্রোনেক্টিন আছে। এটি ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষা করার মূল ভিত্তি।
কেন ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষা করা হয়?
প্রিটাইম লেবরের ঝুঁকি যাতে না থাকে, তাই এই পরীক্ষাটি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডাক্তার সন্দেহ করেন এরকম কোনো উপসর্গ আছে যা আপনাকে প্রিটার্ম লেবরের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তবে আপনাকে তিনি এই পরীক্ষাটি করতে বলবেন।
ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষার ইঙ্গিতগুলি কী কী?
যতক্ষণ না ডাক্তার সন্দেহ করেন যে আপনার এরকম কোনো উপসর্গ আছে যা আপনাকে প্রিটার্ম লেবরের দিকে নিয়ে যেতে পারে, ততক্ষণ আপনাকে তিনি এই পরীক্ষাটি সাধারণত করতে বলবেন না। এর উপসর্গগুলির মধ্যে আছে:
- পেটের ব্যথা
- পিঠের ব্যথা
- টান ধরা
- যোনির ক্ষরণে পরিবর্তন
- সার্ভিক্স এবং জরায়ুর গ্রীবাদেশ প্রসারিত (খোলা) হওয়া
- যে ব্যথাগুলি জরায়ুর সংকোচনকে নির্দেশ করে
যদি মা সময়ের পূর্বে প্রসবের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, তবে এই পরীক্ষাটি করা হয়। উচ্চঝুঁকি সম্পন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে:
- একজন মা যার সঠিক সময়ের আগেই প্রসবের পূর্ব ইতিহাস আছে।
- যেসব মায়ের অতীতে জরায়ু বা সার্ভিকাল সার্জারির অভিজ্ঞতা আছে; অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্ত সার্জারিগুলিতে জরায়ুর পেশির অংশগ্রহণও থাকে, যার কারণে এগুলি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এটি সময়ের পূর্বে জন্মের ঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে।
- গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু জীবনশৈলী ধূমপান সময়ের পূর্বে প্রসবের ঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে।
- গর্ভাবস্থার পূর্বে কম ওজন
- যেসব মায়েদের একটি ছোট সার্ভিক্স থাকে
- দুটি পরপর গর্ভাবস্থার মধ্যে অল্প ব্যবধান: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী পরপর দুটি গর্ভাবস্থার মধ্যে অন্ততপক্ষে 24 মাসের ব্যবধানে থাকা উচিত। এই সময়ে মায়ের দেহ প্রথম গর্ভাবস্থা থেকে সেরে ওঠে।
ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষার জন্য আমি কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করব?
ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষা করানোর আগে বেশ কিছু বিধি নিষেধ আছে যা আপনাকে পালন করতে হবে। এইগুলি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি যদি অনুসরণ না করা হয় তবে একটি ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে যা আপনার ডাক্তারের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। নিম্নলিখিতগুলির 24 ঘন্টা আগের মধ্যে করবেন না:
- যৌনসঙ্গম
- যোনি থেকে রক্তপাত
- পেলভিক এর পরীক্ষা
- ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড
- লুব্রিক্যান্ট, সাবান, লোশন ইত্যাদির মত পদার্থ ব্যবহার করা
- যোনিতে যে কোন প্রকার ওষুধ লাগানো
এই পরীক্ষাটি কিভাবে করা হয়?
- পরীক্ষার টেবিলে আপনাকে চিৎ হয়ে শুতে বলা হবে।
- আপনার ডাক্তার আপনার যোনির মধ্যে একটি স্পেকুলাম রাখবেন।
- এবং আপনার সার্ভিক্স অঞ্চলে একটি লম্বা সরু তুলোর দণ্ড ভিতরে প্রবেশ করাবেন যাতে ক্ষরণ সংগ্রহ করা যায়।
- তারপর এই দণ্ডটিকে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ডের পরে ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষা করা হয় মায়ের সার্ভিস এর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করার জন্য এটি করা হয় ছোট হলে তা সময়ের পূর্বে জন্মের একটি অন্যতম ঝুঁকির কারণ হতে পারে এটিকে ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষার পরে করা হয় কারণ আগে করলে ভ্রূণের পরীক্ষাটিতে মিথ্যা ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে।
ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষার ফলাফল কী?
- ইতিবাচক: এর অর্থ হল আপনার জরায়ুর ভিতরে ফাইব্রোনেক্টিন দুর্বল হয়ে গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে উক্ত মায়ের সময়ের পূর্বে প্রসবের বেশি ঝুঁকি রয়েছে, বিশেষত যদি এই পরীক্ষার ফলাফল গর্ভাবস্থার 22 থেকে 34 সপ্তাহের মধ্যে ইতিবাচক আসে, তবে তিনি হয়তো 7 দিনের মধ্যে প্রসব করবেন। এই ক্ষেত্রে আপনার সময়ের পূর্বে জন্মের সমস্ত জটিলতাগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন।
- নেতিবাচক: যদি ব্রণের ফাইব্রোনেক্টিনের পরীক্ষাটির ফলাফল নেতিবাচক আসে, তার অর্থ হলো মায়ের জরায়ু এবং অ্যামনিওটিক থলির মধ্যেকার আঠাটি এখনো কাজ করছে এবং এখন সময়ের পূর্বে প্রসাবের কোন ঝুঁকি নেই। এখন আপনার ডাক্তার একই দৈনন্দিন পরীক্ষা গুলি করে যাবেন, যাতে অন্য যে কোনো জটিলতাগুলিকে এড়ানো যায়।
উপসংহার
ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষা অত্যন্ত সহজ কিন্তু কার্যকরী উপায়, যার মাধ্যমে মায়ের প্রিটার্ম লেবারের কোনো ঝুঁকি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা যায়। যদি আপনাকে একটি পরীক্ষা করতে বলা হয়, তবে আত্মবিশ্বাসী থাকুন এবং একটি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে যে সমস্ত বিধি-নিষেধ বলা হয়েছে সেগুলি পালন করুন। যদি পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক আসে তবে খুব ভালো। যদি ইতিবাচক আসে তবে চিন্তা করবেন না এবং আপনার ডাক্তারের নির্দেশ পালন করে চলুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
একটি ইতিবাচক ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষার কতদিন বাদে মা প্রসব করবেন?
যে মায়ের ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষায় একটি ইতিবাচক ফলাফল এসেছে, তাদের সকলের ক্ষেত্রে সময়ের পূর্বে প্রসব হবে এমনটা নয়। একটি ইতিবাচক ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষার পরে দু সপ্তাহের মধ্যে প্রসবের সম্ভাবনা 17-41%।
একটি ইতিবাচক পরীক্ষার পরে আমার কী কী ওষুধ খাওয়া উচিত?
আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে কখনো কোন ওষুধ খাবেন না। আপনার ডাক্তার আপনার প্রসবযন্ত্রণাকে কিছুটা দেরিতে করার জন্য কিছু ওষুধ দিতে পারেন অথবা ভ্রূণের ফুসফুসের বিকাশকে দ্রুত করার জন্য কিছু ওষুধ দিতে পারেন।
ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষা কতটা নির্ভরযোগ্য?
বর্তমানে, এটি প্রিটার্ম লেবরের অনুমান করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পরীক্ষা। যদিও গবেষণা অনুযায়ী একটি নেতিবাচক ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষায় 1-3% মায়েদের সময়ের পূর্বে সম্ভাবনা আছে।
ভ্রূণের ফাইব্রোনেক্টিন পরীক্ষা করে ফলাফলের জন্য আমার কতক্ষণ অপেক্ষা করা উচিৎ?
আপনি সাধারণত পরীক্ষার 24 ঘন্টার মধ্যে আপনার ফলাফল আশা করতে পারেন।