বার্ধক্য হল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা এবং বয়স হওয়ার সাথে সাথে বয়স জনিত জটিলতাও আসে। বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত হওয়া নির্ভর করে শরীরের উন্মুক্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণের ওপর। প্রতিটি অঙ্গ বয়সের প্রভাব বিভিন্ন উপায়ে দেখায়।
ত্বক হল মানুষের শরীরের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে দৃশ্যমান অঙ্গ। ত্বকে বার্ধক্যের চিহ্ন হিসেবে কুঁচকানো, খাঁজ এবং ত্বকে সূক্ষ দাগ দেখা যায়, যাকে বলা হয় বলিরেখা।
বলিরেখাকে অনুধাবন করা
ত্বকের বলিরেখা, বিশেষত বলিরেখা সৃষ্টির গতি সাধারণত যে কারণগুলির ওপর নির্ভর করে, তার শ্রেণীবিন্যাস করা হল:
- খাদ্যাভ্যাস
- বংশগতি
- ব্যক্তিগত অভ্যাস
- সূর্যের সামনে প্রচণ্ডভাবে উন্মুক্ত হওয়া ( যাকে ফটোএজিং ও বলে)
- দূষণ
- স্থূলতা
ত্বক দুই ধরনের বার্ধক্য অনুভব করে, যথা, অন্তর্নিহিত বার্ধক্য এবং বাহ্যিক বার্ধক্য। যেখানে, অন্তর্নিহিত বার্ধক্য হল বার্ধক্যের সাধারণ প্রক্রিয়া যা অনেক বছর ধরে চলতে থাকে, বাহ্যিক বার্ধক্য বহির্মুখী কিছু কারণের উপর নির্ভরশীল যা ত্বকের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।
বলিরেখার উপসর্গ
বলিরেখা হল ত্বকে বেশ কিছু সময় ধরে তৈরি হওয়া দাগ এবং ভাঁজ। আপনি এগুলো লক্ষ্য করতে পারবেন প্রথমত চোখ, ঘাড় এবং মুখে। এগুলিকে নিম্নলিখিত হিসেবে চিহ্নিত করা যায়:
- দাগ
- ভাঁজ
- গভীর খাঁজ
বলিলেখার সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণগুলি
ত্বকে বলিরেখা আসার জন্য প্রধান ঝুঁকির কারণটি হল বয়স। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে। এছাড়াও ত্বক নিঃসৃত স্বাভাবিক তেলের উৎপাদন কম হওয়ার ফলে ত্বককে অনেক বেশি বলিরেখাময় দেখায়। এর সাথে ত্বকের নিচে জমে থাকা ফ্যাট এটির ভাঁজ হওয়া, দৃশ্যমান দাগ এবং খাঁজ তৈরির কারণ হয়।
বলিরেখার জন্য বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতি
বলিরেখা কমানোর জন্য বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির শ্রেণীবিন্যাস উপলব্ধ আছে। এগুলিকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়:
- ওষুধ
এগুলি হল বলিরেখা কমানোর জন্য বয়স-নিরোধক ক্রিম এবং আন্ডার আই ক্রিমের মত প্রাসঙ্গিক মলম বা ক্রিমের প্রয়োগ।
- প্রাসঙ্গিক রেটিনয়েড : এগুলি হল নির্দেশিত ওষুধ, ভিটামিন A এর উপজাত পদার্থ, যা প্রচণ্ডভাবে খাঁজ, বলি রেখা এবং সূক্ষ দাগ কমাতে সাহায্য করে। বর্তমানে কয়েকটি প্রচলিত ওষুধ যা ব্যবহৃত হচ্ছে তা হল ট্রেটিনোইন ( এবং তাজারোটেন। একটি বিস্তৃত বর্ণালীর কমপক্ষে সূর্য সুরক্ষা ফ্যাক্টর 30 (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন ও রেটিনয়েড ব্যবহারের পরে সূর্যের আলোয় প্রকাশ্যে বেরোনোর পড়ে পোড়াভাব রোধ করতে এটি সাথে সাথে ব্যবহার করতে হবে।
- বলিরেখা-নিরোধী ক্রিম : কিছু নির্দেশিকা-বিহীন ক্রীম আছে যা বিদ্যমান বলিরেখার যৎসামান্য উন্নতি করে। সক্রিয় উপাদানের অভাবে, এইগুলির প্রভাব বেশি থাকে না। এগুলো সাধারণত স্থানীয় দোকানে বয়স-নিরোধী ক্রিম এবং আন্ডার আই ক্রিম হিসেবে পাওয়া যায়।
2. অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি
- লেজার : এই পদ্ধতিটি ত্বকের সবচেয়ে বাইরের স্তরটিকে (এপিডার্মিস) ধ্বংস করে এবং অন্তর্বর্তী স্তরকে (ডার্মিস) উন্মুক্ত করে। ক্ষত/ পোড়ার নিরাময়ের ফলে একটি আঁটোসাঁটো ভাব এবং তুলনামূকভাবে সজীব ত্বক ফুটে ওঠে। তবে এটি আর যাইহোক, সমস্ত বলিরেখা এবং খাঁজকে সম্পূর্ণ অপসারণের প্রতিশ্রুতি দেয় না।
- রাসায়নিক পিল : আপনার ডাক্তার একটি রাসায়নিক দ্রবণ লাগান যা ত্বকের প্রথম কয়েকটি স্তরকে তুলে দেয়। এরপর লেজার চিকিৎসার মতো, ক্ষত ঠিক হওয়ার পর মসৃণ ত্বক প্রকাশিত হয়।
- ফটোডায়নামিক পুনর্জীবন: সূক্ষ বলিরেখাগুলিকে ফটোডায়নামিক থেরাপির (PDT) সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়।
- ডার্মাব্রেশন : আপনার ডাক্তার ত্বকের স্তরগুলো একটি দ্রুত ঘুরতে থাকা ব্রাশের সাহায্যে গুঁড়ো গুঁড়ো করে তুলে ফেলেন, যার ফলে ত্বক মসৃণ হয়। মাইক্রো-ডার্মাব্রেশন নামক আরেকটি সূক্ষ্ম পদ্ধতি আছে, যা শুধুমাত্র ত্বকের কিছু স্তরই গুঁড়ো করে তুলতে পারে।
- বোটুলিনাম টক্সিন টাইপ A (বোটক্স): আপনার ডাক্তারের এই পদ্ধতিটি পেশীর সংকোচনকে প্রতিরোধ করে, যা মসৃণ ত্বক প্রদান করে। এটি ত্বকের কিছু বিশেষ পেশিতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
- ফেস – লিফ্ট : এটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আপনার ত্বকের নিচে থাকা পেশী এবং কলাকে টানটান করে, যাতে মুখের ত্বক আঁটসাঁট দেখায়।
- নরম কলা পূর্ণকারী : এটিতে আপনার ডাক্তার ত্বককে ঝুলে যাওয়া এবং খাঁজ হওয়া থেকে প্রতিরোধের জন্য কিছু পূর্ণকারী যেমন চর্বি এবং কোলাজেন প্রবেশ করান।
আপনার অবশ্যই উপরিউক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি নেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারকে বলা উচিত এবং তাঁদের মতামত নেওয়া উচিত।
আরো জানতে একজন ডক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
বলিরেখা এড়িয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা :
বার্ধক্যে বলিরেখার এড়িয়ে চলার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হল নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলা :
- প্রচুর জল পান করা এবং সবসময় আর্দ্র থাকুন
- যে কোনো ময়শ্চারাইজারের নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রয়োগ ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং এটিকে অনার্দ্র হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে
- প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহযোগে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
- সবসময় আপনার ত্বককে সূর্য থেকে আড়াল করবেন এবং দিনে দুইবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন, এমনকি রৌদ্রহীন দিনেও।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQS)
- জল খেলে কি বলিরেখা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?
জল খেলে তা ত্বককে আর্দ্র রাখে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি বলিরেখাকে এড়ানোর জন্য এখনো সঠিক বলে প্রমাণিত হয়নি। ময়শ্চারাইজার প্রয়োগ করলে সেটি ত্বকের মধ্যে জলকে ধরে রাখে এবং শুকনো হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং বলিরেখার আসা প্রতিরোধ করে।
- বলিরেখা কি স্থায়ী?
বলিরেখা যদি সঠিক সময় চিকিৎসা না হয় তাহলে এটি স্থায়ী। যদিও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এর তীব্রতা কমানো যেতে পারে, যিনি বিভিন্ন চিকিৎসার পদ্ধতি নির্দেশ দেবেন যেমন সাময়িক ক্রিম এবং বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি যেমন বোটক্স, ফিলার এবং ফেস্ লিফ্ট।
- বাড়িতে করা কোন প্রতিকারের মাধ্যমে বলিরেখা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব?
যদিও বাড়ির কোনো প্রতিকার বা কোনো চিকিৎসা বলিরেখার জন্য স্থায়ী সমাধান প্রদান করে না, তবুও কিছু বিশেষ অভ্যাস মেনে চললে বলিরেখা একটু কমানো যেতে পারে :
- প্রচুর জল পান করতে হবে।
- সানস্ক্রিন অথবা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
- একটি সুস্থ স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে।