বাড়িHealth A-Zকলেরা : উপসর্গ, কারণ, চিকিৎসা, প্রতিকার ও রোগনির্ণয়

কলেরা : উপসর্গ, কারণ, চিকিৎসা, প্রতিকার ও রোগনির্ণয়

সামগ্রিক ধারণা

দূষিত জলের মাধ্যমে যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ সংক্রমিত হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো কলেরা। এই রোগের উপসর্গ হলো ডায়রিয়া এবং জলশূন্যতা। যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তবে সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। 

বেশিরভাগ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে আধুনিক জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং জলের ব্যবস্থাপনা কলেরা রোগকে প্রায় দূর করে দিয়েছে। কিন্তু আফ্রিকা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং হাইতির মত কিছু কিছু অঞ্চলে আপনি এখনো কলেরার রোগী দেখতে পাবেন। দারিদ্র্য কবলিত যুদ্ধ বিধ্বস্ত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ঘিঞ্জি জায়গায় এবং যথেষ্ট অনুপযুক্ত অবস্থায় বসবাস করেন। এর কারণে কলেরা মহামারী ছড়ানোর সুযোগ বৃদ্ধি পায়। 

 এই রোগটিকে সহজেই চিকিৎসা করা যায় প্রচন্ড জলশূন্যতা থেকে মৃত্যুর ঘটনাকে একটি সহজ এবং সাধ্যের মধ্যে রিহাইড্রেশন উপায়ে আটকানো যায়। 

 কলেরা কী? 

 যেমনটা আগে বলা হয়েছে, কলেরা হল একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ, যা দূষিত জলের মাধ্যমে ছড়ায়। ভি. ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী এবং 1883 সালে জার্মান ব্যাকটেরিয়া বিশারদ রবার্ট কচ এটি আবিষ্কার করেছিলেন। 

ইজিপ্টে মহামারী চলার সময় রবার্ট কচ এই রোগটি সম্পর্কে গবেষণা করেন এবং কলেরা রোগে মৃত রোগীদের অন্ত্রে এই ব্যাকটেরিয়া খুঁজে পান। কিন্তু তিনি জীবাণুটিকে আলাদা করতে পারেননি এবং এর দ্বারা সংক্রমিত প্রাণীদের আলাদা করে শনাক্ত করতে পারেননি। যদিও তার পরের বছরে ভারতে তিনি সফলভাবে ব্যাকটেরিয়া থেকে পৃথক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছিল যে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা ভিজে মাটি এবং কলেরা রোগের মধ্যে জন্মায় এই ব্যাকটেরিয়াটি অন্যান্য আরো বিভিন্ন স্থানে বাস করে যেমন জলতল, উদ্ভিদ, মিজেসের (এক ধরণের মাছি) ডিম ও খোলক।  

যখন এই ব্যাকটেরিয়াগুলি একটি খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর এলাকায় প্রবেশ করে, তখন বিষাক্ত স্ট্রেইনটি একটি বিষ উৎপন্ন করে, যার কারণে ব্যাপক ডায়রিয়া হয় এবং এটি একটি গুরুতর মহামারীতে পরিণত হয়। এই মহামারি আবহাওয়ার পরিবর্তন, হ্রাসপ্রাপ্ত জনসংখ্যা এবং উন্নত পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। 

কলেরা কী কারণে হয়

কলেরা হওয়ার মুখ্য কারণ হলো ভিব্রিও কলেরি নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে শরীর থেকে বিপুল পরিমাণে জল বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই ডায়রিয়া হয় এবং শরীর থেকে দ্রুত তরল পদার্থ এবং ইলেক্ট্রোলাইট হ্রাস পায়। এটি কলেরা রোগীদের ক্ষুদ্রান্ত্রে উপস্থিত। 

যেসব মানুষদেরএই রোগের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে, তারা কোন প্রকার অসুস্থতার লক্ষণ লক্ষ্য করতে নাও পারেন। যদিও তারা তাদের মল থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো, খাবার এবং জল দূষিত করার জন্য দায়ী। ব্যাকটেরিয়াটি উপস্থিত:

  • ভূপৃষ্ঠ অথবা কুঁয়োর জল: জনসাধারণের ব্যবহার্য দূষিত কুঁয়ো কলেরার প্রাদুর্ভাবের অন্যতম প্রচলিত উৎস। যে সমস্ত অঞ্চলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেই, সেখানে ঝুঁকি বেশি। 
  • কাঁচা বা রান্না না করা সামুদ্রিক খাদ্য: একটি দূষিত উৎস থেকে কাঁচা বা রান্না করা সামুদ্রিক বিশেষত্ব সেলফিশ খেলে মানুষের কলেরা হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, সেই সামুদ্রিক খাদ্যগুলি মেক্সিকো থেকে আনা হয়েছিল। 
  • ফল এবং সবজি: দূষিত অঞ্চল থেকে কাঁচা, না ছাড়ানো ফল ও সব্জি সংক্রমণের উৎস হতে পারে।  কখনও কখনও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, কম্পোস্টবিহীন সার বা সেচের জলের সাথে মিশ্রিত অপরিশোধিত কাঁচা পয়ঃনিষ্কাশন পণ্যগুলিকে দূষিত করতে পারে। 
  • শস্য: যে দেশগুলিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, সেখানে রান্নার পর চাল ও মিলেট সহ সমস্ত শস্যগুলি দূষিত হয়ে যায়। বহুক্ষণ ধরে রান্না করা শস্য এবং মিলেটকে ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিলে এই ব্যাকটেরিয়া সেখানে জন্মায়। 

কলেরার উপসর্গ 

অধিকাংশ সংক্রামিত মানুষ অসুস্থ হন না বা তারা যে সংক্রামিত তা জানতেও পারেন না। তারা 7 থেকে 14 দিন ধরে তাদের মলের মাধ্যমে এবং জল দূষিত করে কলেরা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ছড়ায় এবং অন্যদের সংক্রামিত করে চলে। 

কিছু কিছু কলেরা-সংক্রামিত রোগীদের অল্প বা মাঝারি ডায়ারিয়ার উপসর্গ দেখা যায়। কলেরা ও অন্যান্য রোগ, যাতে এই একই জাতীয় সমস্যা হতে পারে, তাদেরকে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা মুশকিল হতে পারে। কম গুরুতর ক্ষেত্রে সংক্রামিত হবার কিছুদিনের মধ্যে রোগী কলেরার লক্ষণ লক্ষ্য করতে শুরু। নিম্নলিখিতগুলি কলেরার উপসর্গ:

  • ডায়ারিয়া: কলেরার কারণে ডায়ারিয়া হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এর কারণে অতি দ্রুত শরীর থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায়, প্রতি এক ঘন্টায় প্রায় 1 লিটার – এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। কলেরার কারণে ডায়রিয়া হলে তাকে চেনার অন্যতম একটি উপায় হলো যে এতে প্রায়শই একটি বিবর্ণ এবং চাল ধোয়া জলের মত এবং দুধের মত জল দেখতে পাওয়া যায়।  
  • বমি এবং গা গোলানো: কলেরার প্রাথমিক ধাপগুলিতে একজন রোগীর বমি হতে পারে যা বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে পারে। 
  • জলশূন্যতা: কলেরার উপসর্গগুলি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি অতি দ্রুত শুরু হয়ে যেতে পারে এবং এটি অল্প থেকে  অত্যন্ত গুরুতর হতে পারে শরীর থেকে 10% অথবা  তার বেশি তরল পদার্থ বাইরে নিষ্কাশিত হওয়ার অর্থ হল যে রোগে ভুগছেন খিটখিটে ভাব, ক্লান্তি, ফোলা চোখ, শুষ্ক মুখ, অত্যন্ত বেশী পিপাসা হয় এবং চামড়া কুঁচকে যায়, যাতে ত্বক ভাঁজ করে চিমটি কাটলে আবার আগের অবস্থায় ধীরে ধীরে ফিরে আসে, অল্প মূত্রত্যাগ এবং একেবারেই মূত্রত্যাগ না হওয়া, নিম্ন রক্তচাপ এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন জলশূন্যতার লক্ষণ। জলশূন্যতার ফলে দেহে ভারসাম্য রক্ষাকারী খনিজ পদার্থগুলিও হ্রাস পেতে থাকে। এই ভারসাম্যহীনতাকে বলা হয় ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা। 

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কলেরার উপসর্গ

যেসব বাচ্চারা কলেরায় সংক্রমিত হয়েছে, তারা বড়দের মতো উপসর্গ প্রদর্শন করে। কিন্তু তাদের কিছু আলাদা উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন:

  • জ্বর
  • খিঁচুনি
  • প্রচণ্ড ঝিমুনি
  • কোমা 

কখন ডাক্তার দেখাতে যাবেন

শিল্পোন্নত দেশগুলিতে কলেরার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। যদি আপনি একটি সংক্রামিত জায়গায় থেকে থাকেন, তবে যদি আপনি কঠোরভাবে খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলি মেনে চলেন, তবে আপনার সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও, যদি একটি কলেরা আক্রান্ত স্থানে যাওয়ার ঠিক পরেই আপনার প্রবল ডায়ারিয়া হয়, তবে অতি সত্বর চিকিৎসকের সাহায্য নিন এবং চিকিৎসা করান।  ঝুঁকির লক্ষণ 

অত্যন্ত গুরুতর ক্ষেত্রগুলিতে কলেরা দ্বারা সংক্রমিত মানুষ জলশূন্যতা বা শকের কারণে মারা যেতে পারেন। জলশূন্যতা এবং শক ছাড়া কলেরার অন্য কিছু জটিলতা আছে, সেগুলি হল:

নিম্ন রক্তচাপ ( হাইপোগ্লাইসেমিয়া) – কলেরা ব্যক্তির রক্তের শর্করার মাত্রা অত্যন্ত কমিয়ে দিতে যার কারণে ব্যক্তি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে তার খাওয়া বা কিছু পান করার শক্তি থাকে না। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে সিজার হয়, অজ্ঞান  হয়ে যায় অথবা মৃত্যুও ঘটতে পারে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে। 

 পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়াLow potassium levels –  কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তিদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যেমন, পটাশিয়ামের ঘাটতি হচ্ছে তাদের মলের মাধ্যমে। কম পরিমাণে পটাশিয়াম থাকলে তা হৃদপিণ্ড এবং স্নায়ুর কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এমনকি এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

বৃক্ক বিকল হয়ে যাওয়া – কলেরার সময় বৃক্ক তাদের পরিস্রাবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে তরল পদার্থ, ইলেকট্রোলাইট এবং বর্জ্য পদার্থ দেহে জমা হয়। 

জলশূন্যতার আদর্শ লক্ষণ 

সাধারণত একজন জলশূন্য ব্যক্তির শরীরে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায় :

  • শুষ্ক মুখ এবং ত্বক
  • কাচের মত চোখ,  কোন অশ্রু নেই
  • দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থা,  কুঁড়েমি এবং ঘুম ঘুম ভাব
  • দ্রুত নাড়ির স্পন্দন
  • মূত্র কমে যাওয়া বা কোন মূত্র উৎপন্ন হওয়া
  • তৃষ্ণা

কলেরা রোগ নির্ণয় 

মল পরীক্ষা করার মাধ্যমে কলেরার ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করা যেতে পারে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ডাক্তারেরা  এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কলেরা ডিপস্টিক টেস্ট করেন। দ্রুত নিশ্চিত করা হলে তা সরকারকে কলেরার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে। 

কলেরার চিকিৎসা 

কলেরা রোগ কলেরা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, যার জন্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, যাতে জটিলতাগুলিকে এড়ানো যায়।

  •  নিষ্কাশিত ইলেক্ট্রোলাইট এবং তরলকে প্রতিস্থাপিত করার জন্য ডাক্তার আপনাকে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্টস (ওআরএস) খেতে বলবেন। 
  • তরল নিষ্কাশনকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ধমনীর মধ্যে তরল চালনা করা  হবে।
  • কলেরার উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডক্সিসাইক্লিন- এর মত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। 

প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ 

প্রতিরোধ

  • জীবাণুমুক্ত অথবা ফোটানো জল পান করুন।
  •  জলে বরফ খাওয়া বন্ধ করুন।
  •  খাবার আগে দুধ ফুটিয়ে নিন।
  •  ভালো ভাবে রান্না করা এবং গরম খাবার খান।
  •  কাঁচা ফল, শাকসবজি, মাছ অথবা মাংস খাবেন না। 

নিয়ন্ত্রণ

নিম্নলিখিত প্রতিরোধগুলি মেনে চললে কলেরাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় :

  • পরিচ্ছন্ন পানীয় জল পান করা।
  •  ঘরে পরিছন্নতা এবং স্বাস্থ্য বিধি বজায় রাখা।
  •  দূষিত না খাওয়া।
  • টিকাকরণ
  • মানুষের চলাফেরার সীমাবদ্ধ করা
  •  যেসব মানুষ অসুস্থ নন অথবা কোন উপসর্গ তাদের মধ্যে নেই এমন বিশাল পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া
  •  সংক্রামিত অঞ্চল থেকে খাবার আনানো বন্ধ করুন। 

কলেরার টিকা

 যদি আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কলেরা আক্রান্ত অঞ্চলে এসেছেন তবে আপনাকে মুখের মাধ্যমে  ভ্যাক্সকোরা নামক একটি টিকার তরল ডোজ দেওয়া হবে। আপনার ঘোরার অন্ততপক্ষে 10 দিন আগে আপনাকে এই টিকা নিতে হবে। যদিও এই ঘোরা হয়ে যাওয়ার পর কলেরা আটকানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বহুসংখ্যক দেশ  মৌখিক মাধ্যমে টিকাকরণও করায়। আরও তথ্যের জন্য আপনাকে আপনার নিকটবর্তী ডাক্তার অথবা স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকের  সঙ্গে যোগাযোগ  করতে হবে।

কলেরার ঝুঁকিগুলি কী কী?

সকলেই কলেরার গুরুতর দিকে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যদিও পূর্ববর্তী সময়ে একজন সংক্রামিত মায়ের কাছে স্তন্যপান করার পর একটি সদ্যোজাতের যত্ন করার বিষয়টি ব্যতিক্রমী। বেশ কিছু কারণের জন্য আপনার কলেরার গুরুতর লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখা দিতে পারে।  ঝুঁকির কারণগুলি হল নিম্নরূপ:

  • খারাপ স্বাস্থ্যবিধি: কলেরার ব্যাকটেরিয়া সাধারণত নোংরা পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে যেমন উদ্বাস্তু শিবির দরিদ্র দেশ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে  বিপর্যস্ত  অঞ্চলগুলিতে।
  • হ্রাসপ্রাপ্ত বা অস্তিত্বহীন পাকস্থলীর অ্যাসিড: ব্যাকটেরিয়াটি একটি অম্ল পরিবেশে বাঁচতে পারে না, যেমন পাকস্থলীর অ্যাসিড এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে একটি বাধা হতে পারে। কিন্তু শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যে সকল মানুষেরা অ্যান্টাসিড, এইচ2 ব্লকার্স বা ক্রোটন পাম্প ইনহিবিটরের মতো ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাদের পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যার কারণে তাদের সুরক্ষা অনেকটা কমে যেতে পারে এবং কলেরা হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  •  ঘরের ঝুঁকি: যদি আপনি একজন কলেরা রোগীর সঙ্গে থাকেন, তবে আপনার কলেরা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।.
  • ও রক্তের শ্রেণী: যাদের রক্তের শ্রেণী ও, তাদের অন্য যে কোনো রক্তের শ্রেণীর তুলনায় কোনো অজ্ঞাত কারণে কলেরা হবার সম্ভাবনা দুইগুণ বেশী। 
  • কাঁচা ও কম সিদ্ধ হওয়া সামুদ্রিক খাবার: কাঁচা এবং অসিদ্ধ  সামুদ্রিক খাবার বিশেষত কলেরা সংক্রামিত জলের সেলফিশ কলেরা হবার সম্ভাবনা থাকে।

কলেরার জটিলতাগুলি কী কী?

কলেরার গুরুতর ক্ষেত্রে এটি অতি দ্রুত প্রাণঘাতী হতে পারে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তরল পদার্থ এবং ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে গেলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্র ছাড়া কিছু ব্যক্তিদের কলেরার উপসর্গগুলি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরেও জলশূন্যতা বা শকের জন্য কোন চিকিৎসা হয় না। শক এবং মৃত্যু কলেরার মুখ্য জটিল সমস্যা। অন্যান্য জটিলতাগুলি হল:

  • রক্তের হ্রাসপ্রাপ্ত শর্করার মাত্রা: এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া নামেও পরিচিত।  রোগীরা এতটাই অসুস্থ থাকেন, যে খেতে পারেন না, তখন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে কমে যায়। শর্করা অথবা গ্লুকোজ শরীরকে প্রাথমিক শক্তির জোগান দেয়। শিশুদের এই জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি যার কারণে সিজার, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং কোনো কোনো সময় মৃত্যু ঘটতে পারে। 
  • পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া: কলেরা রোগীদের মলের মাধ্যমে অতি দ্রুত তরল পদার্থ এবং খনিজ পদার্থ, যেমন পতাশিয়াম বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তাই পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকলে হৃদপিণ্ড এবং স্নায়ুর কার্যকারিতায় সমস্যা দেখা যায় এবং এগুলি সাধারণত প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। 
  • বৃক্ক বিকল হয়ে যাওয়া: যখন বৃক্ক পরিস্রাবণ  করতে পারে না তখন অতিরিক্ত তরল পদার্থ এবং ইলেক্ট্রোলাইট জমা হয় যার কারণে একটি প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হয় যেসব কলেরা রোগীদের বৃক্ক বিকল হয়ে যায় তাদের অধিকাংশ সময় শক অনুভূত হয়। 

উপসংহার

অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এবং দূষিত জল থেকে আপনি সংক্রামিত হতে পারেন, তবু প্রয়োজনীয়  প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি একজন কলেরা রোগী হন, তবে আপনার অতিসত্বর চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন, যাতে আপনার দ্রুত চিকিৎসা করা যায় এবং আপনার কলেরা রোগকে প্রাণঘাতী হওয়া থেকে আটকানো যায়। 

FAQs

যদি আমি একটি কলেরা সংক্রামিত অঞ্চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করি তবে আমি নিজেকে কিভাবে রক্ষা করতে পারি?

 যদি আপনি একটি কলেরা আক্রান্ত অঞ্চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনাকে অবশ্যই কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যেমন 

  •  ব্রাশ করা রান্না করা অথবা বরফ তৈরির জন্য নিরাপদ পানীয় জল ব্যবহার করুন
  •  পরিষ্কার জল এবং সাবান দিয়ে ঘনঘন নিজের হাত পরিষ্কার করুন
  •  শৌচাগার ব্যবহার করুন অথবা আপনার মল মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে দিন।  যখন আপনি মল ত্যাগ করবেন তখন জলাশয় ব্যবহার করবেন না। 
  •  ভাল করে সিদ্ধ করা  গরম খাবার  খান এবং খোসা ছাড়িয়ে ফল ও শাকসবজি খান
  •  নিয়মিত রান্নাঘর, মেঝে এবং শৌচালয় পরিষ্কার করুন। 

কলেরা কি এখনো হয়?

আফ্রিকা,  হাইতি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এখনও দেখা যায়। 

 কলেরাকে নীল মৃত্যু কেন বলা হয়?

 হ্যাঁ, কলেরা হলো নীল মৃত্যু।  এটি কলেরার অপর নাম তার কারণ এই রোগে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার কারণে কলেরা রোগীর শরীর নীল হয়ে যায়। 

 সবচেয়ে বেশি কোন দেশ  কলেরায় আক্রান্ত?

 আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক  প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, ইথিওপিয়া এবং নাইজেরিয়ায় ব্যাপক কলেরার প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। 

 কলেরার জন্য কোন ব্যাকটেরিয়া দায়ী? 

 কলেরার জন্য ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়া দায়ী। 

  কলেরার জন্য কোন খাদ্য ভালো?

যেহেতু কলেরার কারণে জলশূন্যতা দেখা যায়, তাই যে তরলগুলি ইলেক্ট্রোলাইট এবং নুনকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে সেই ধরনের তরল পান করা যেতে পারে। একজন রোগীকে প্রচুর পরিমাণে জল, সোডাজল এবং নারকেলের জল সারাদিন ধরে দেওয়া উচিত। 

কলেরা কীভাবে ছড়াতে পারে?

মল এবং দূষিত জলের মাধ্যমে এটি এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যেতে পারে।

Avatar
Verified By Apollo General Physician
Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience
Quick Appointment
Most Popular

কলপোস্কোপির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী?

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন রিং কি পৌরুষত্বহীনতার চিকিৎসা করতে পারে?

হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটার জুতো বাছাই করার সময় চারটি দিক মনে রাখা উচিত

ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার লক্ষণসমূহ যেগুলি আপনার বিবেচনা করা উচিত

Quick Book

Request A Call Back

X