বাড়িGynaecology Careসিস্টোসেল: এর অর্থ, লক্ষণ এবং কারণ

সিস্টোসেল: এর অর্থ, লক্ষণ এবং কারণ

ভূমিকা

সংজ্ঞা অনুসারে, সিস্টোসেল হল এমন একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবস্থা যেখানে একজন মহিলার যোনির মধ্যে তার মূত্রথলি ফুলে যায়। এটি প্রল্যাপসড ব্লাডার, ফলেন ব্লাডার বা একটি অ্যান্টিরিওর ভ্যাজাইনাল প্রোল্যাপস নামেও পরিচিত।

 সিস্টোসেল সম্পর্কে তথ্য

যখন আপনার মূত্রাশয়কে সঠিক অবস্থানে রাখা লিগামেন্টগুলি এবং যোনি ও মূত্রাশয়ের মধ্যবর্তী কলাগুলি দুর্বল বা প্রসারিত হয়ে যায়, তখন এটি ঘটে। যার ফলে যোনির মধ্যে মূত্রাশয়টি ফুলে যায়। বয়সের সাথে সাথে পেশী এবং কলাগুলি দুর্বল হওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে, যার জন্য সিস্টোসেল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

বিভিন্ন ধরনের সিস্টোসেল কী কী?

চিকিৎসকরা একটি গ্রেডিং সিস্টেম ব্যবহার করে সিস্টোসেলকে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন।

1. গ্রেড 1 হল সিস্টোসেলের সবচেয়ে মৃদুতম রূপ, যেখানে মূত্রাশয়টি যোনিপথে অল্প কিছুটা নেমে এসেছে।

2. গ্রেড 2 হল মধ্যপন্থী অবস্থা, যেখানে মূত্রাশয় যোনির মুখের দিকে নেমে যায়।

3. গ্রেড 3 হল সিস্টোসেলের গুরুতর রূপ, যেখানে মূত্রাশয় যোনিমুখের মধ্য দিয়ে আয়তনে বড় হয়ে যায়।

যদি এটি আরও গুরুতর অবস্থায় পৌঁছে থাকে, তাহলে আপনার মূত্রাশয় এবং যোনি প্রাচীর এতটাই নিচে নেমে যেতে পারে যে তারা যোনির খোলা মুখের মাধ্যমে সম্ভাবত বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।

সিস্টোসেল হলে আপনি কী কী লক্ষণ এবং উপসর্গ অনুভব করবেন?

সিস্টোসেল যত বেশি গুরুতর হবে, উপসর্গ অনুভব করার সম্ভাবনা ততটাই বাড়বে। মহিলাদের দ্বারা অনুভূত এমন কিছু সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

●     মনে হবে যোনি থেকে যেন কিছু একটা পড়ে যাচ্ছে

●      যোনিতে একটা  স্ফীতি অনুভব করা

●     প্রস্রাব শুরু করতে গিয়ে অসুবিধা অনুভব করা

●     ঘন ঘন প্রস্রাব বা ভীষণ জোরালো প্রস্রাবের অনুভূতি

●     অসম্পূর্ণ প্রস্রাবের অনুভূতি

●      শ্রোণিদেশ ভারী হওয়া বা পূর্ণতার অনুভব, বিশেষ করে যখন আপনি চাপ দেন, কাশি হয়, নিচে ঝোঁকেন বা উঠে দাঁড়ান।

●     শ্রোণিদেশ এবং পিঠের নিচের দিকে ব্যাথা।

●     ঘন ঘন মূত্রনালীর সংক্রমণ।

●     বেদনাদায়ক যৌন মিলন

●      প্রস্রাব করে ফেলা বা প্রস্রাবের সংযমের অভাব

●      ট্যাম্পুন বা এইধরনের কিছু প্রয়োগকারী প্রবেশ করাতে সমস্যা।

এই লক্ষণ ও উপসর্গগুলি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় যখন আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে আপনি শুয়ে পড়লে এটা আপনার নজর থেকে এড়িয়ে যেতে পারে।

আপনার কখন ডাক্তার দেখা উচিত?

আপনি যদি উপরের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির মধ্যে কোন একটিও অনুভব করেন বা দেখতে পান তবে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

অ্যাপোলো হাসপাতালে কোনো সাক্ষাৎকারের অনুরোধ করতে বিব্রত বোধ করবেন না।

সিস্টোসেলের কারণ কী?

আপনার মূত্রাশয় এবং যোনির প্রাচীরকে সহায়তাকারী পেশী এবং সংযোগকারী কলাগুলির দুর্বলতা বা ক্ষতির কারণে সিস্টোসেল হয়। এখন, এর জন্য একাধিক কারণ থাকতে পারে। সেগুলি হল:

●     গর্ভাবস্থা এবং প্রসব: প্রসবকালীন সময়ে পেশীতে প্রচুর চাপ পড়ে, বিশেষ করে যোনিপথে প্রসব হলে।

●      বারবার ভারী বস্তু উত্তোলন সহ তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ।

●     স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন থাকা।

●      মলত্যাগ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় বারবার পেশীতে টান পড়া।

●     শ্রোণিদেশ পুনর্গঠনের অস্ত্রোপচারের ইতিহাস থাকলে।

●     সিস্টোসেল বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জিনের পারিবারিক ইতিহাস।

●     ইহলারস ড্যানলোস সিন্ড্রোমের মতো কিছু সংযোগকারী কলা জনিত ব্যাধি।

●     ঘন ঘন কাশি।

●      বয়স বৃদ্ধির কারণে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়।

●     হাইপোয়েস্ট্রোজেনিজম বা ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি।

●      শ্রোণী অঙ্গের ক্যান্সারের চিকিৎসা।

সিস্টোসেলের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?

নিম্নলিখিত কারণগুলি আপনাকে সিস্টোসেলের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে:

●     গর্ভাবস্থা এবং প্রসব: আপনার যদি একটি যন্ত্র-সহায়তামূলক প্রসব হয় বা একাধিক গর্ভধারণ করে থাকেন বা যদি আপনার শিশুর জন্মের সময় ওজন বেশি থাকে, তাহলে আপনার সিস্টোসেলের ঝুঁকি বেশি।

●     হিস্টেরেক্টমি: আপনার জরায়ু অপসারণ করা হলে সেটা আপনার শ্রোণিদেশের ভিতকে দুর্বল করে দিতে পারে।

●     বয়স: ইস্ট্রোজেন আপনার যোনির চারপাশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী রাখে, কিন্তু মহিলাদের মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন কম তৈরি হয়। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে শ্রোণিদেশের ভিতের শক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

●     স্থূলতা: স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন আপনাকে সিস্টোসেলের জন্য সংবেদনশীল করে তোলে।

●     জিনগত: আপনি প্রথম থেকেই দুর্বল সংযোজক কলা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারেন, এবং এর ফলে আপনার উচ্চ ঝুঁকি থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে ।

কীভাবে একটি সিস্টোসেলের চিকিৎসা করা যেতে পারে?

চিকিৎসার বিকল্পগুলি – রোগীর বয়স ও সন্তান ধারণের ইচ্ছা, যৌন মিলন চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা এবং একজন মহিলার ইতিমধ্যেই থাকা অন্যান্য রোগের অবস্থার সঙ্গেও সম্পর্কিত। এর চিকিৎসা অস্ত্রোপচার করে বা অস্ত্রোপচার ছাড়া উভয় ব্যবস্থাপনা নিয়েই গঠিত।

অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিৎসা:

●     পেসারি: এটি একটি অপসারণযোগ্য যন্ত্র যা যোনিপথে প্রবেশ করানো হয়। এটি অগ্রবর্তী যোনি প্রাচীরকে সহায়তা করে, মূত্রাশয়কে জায়গায় ধরে রাখে এবং প্রসারিত অবস্থাকে অবরুদ্ধ করে। এগুলি বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির হয়। যোনিতে জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ করতে এবং এটি এড়াতে এইগুলিকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে বের করে পরিষ্কার করতে হবে।

●      শ্রোণীদেশের ব্যায়াম: শ্রোণীদেশের পেশীকে শক্তিশালী করার জন্য এগুলি প্রত্যেকের জন্য আলাদা রকম এবং কাঠামোগত ব্যায়াম। এগুলি কেগেল ব্যায়াম নামেও পরিচিত।

অস্ত্রোপচার দ্বারা করা চিকিৎসা

●      এই ক্ষেত্রে ত্রুটির কারণের উপর এবং এটি অগ্রবর্তী যোনির প্রাচীরের উপরের, মধ্য বা নীচের অংশ – কোথায় ঘটেছে তার উপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচারটি হয়।

●      সিস্টোসেল মেরামত করার জন্য পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচারগুলির মধ্যে একটি অ্যান্টিরিওর কোলপোরাফি নামে পরিচিত। যেখানে সার্জেন মূত্রাশয়টিকে তার পূর্ব অবস্থানে ফিরিয়ে দেন এবং সেলাইয়ের মাধ্যমে মূত্রাশয়কে ধরে রাখে এমন পেশী এবং কলাগুলিকে শক্ত করে দেন।

●     অব্লিটারেটিভ সার্জারি হল আরেকটি বিকল্প যেখানে মূত্রাশয়কে আরও সহায়তা দেওয়ার জন্য যোনির সমস্ত অংশ বা কিছু অংশ সরু বা ছোট করে দেওয়া হয়।

সিস্টোসেলের জটিলতাগুলি কী কী?

জটিলতার মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা, বারবার মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং সংযমের অভাব। প্রস্রাব ধরে রাখা এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনি মূত্রাশয়ে জমা সমস্ত প্রস্রাব খালি করতে অক্ষম হবেন। আর সংযমের অভাব মানে হল প্রস্রাব করে ফেলা।

 সিস্টোসেল যৌন ক্রিয়াকলাপকেও প্রভাবিত করে, কারণ সামনের যোনির প্রাচীর যোনির খোলা মুখের মধ্য দিয়ে বাইরে প্রসারিত হয়ে যায়।

কীভাবে আপনি একটি সিস্টোসেল প্রতিরোধ করতে পারেন?

সাধারণভাবে, সিস্টোসেল কোনভাবে প্রতিরোধ করা যায় না। যদিও, এটির অবনতি রোধ করার জন্য যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে তা হল:

●     নিয়মিত শ্রোণীদেশের পেশীর ব্যায়াম করা

●     আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করা

●     খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন করা, যেমন বেশি করে ফল ও শাকসবজি খাওয়া এবং অন্ত্র সুস্বাস্থ্য রাখার অভ্যাস বজায় রাখা।

●      আরেকটি উপায় হল ভারী বস্তু উত্তোলন এড়ানো বা একান্তই এটি এড়ানো না গেলে  সঠিকভাবে সেটাকে উত্তোলন করুন।

●      কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করুন এবং তার চিকিৎসা করুন, যাতে শ্রোণীদেশের পেশীর উপর চাপ এড়ানো যায়।

●     দীর্ঘস্থায়ী কাশি নিয়ন্ত্রণ।

●     ধূমপান বন্ধ করা

উপসংহার

সিস্টোসেল সাধারণত অস্বস্তি সৃষ্টি করে। আপনার একটি ভাল খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিৎ, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, আপনি যদি এই ধরনের কোনো অস্বস্তি অনুভব করেন বা উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলি অনুভব করেন, তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)?

সিস্টোসেল কি গুরুতর বা প্রাণঘাতী?

সিস্টোসেল হলে তাতে সাধারণত জীবনের ঝুঁকির কারণ থাকে না, এবং এর উপসর্গের উপর ভিত্তি করে সেই অনুযায়ী অনেক চিকিৎসার বিকল্প উপলব্ধ আছে।

উপেক্ষা করলে কি আমার সিস্টোসেল খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে?

যদি এর চিকিৎসা সময়মত না করা হয়, তবে সিস্টোসেলের সময়ের সাথে সাথে গুরুতর আকার নেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যা প্রস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং তাতে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

পেস্যারি কী ?

পেস্যারি হল একটি ছোট যন্ত্র যা মূত্রাশয়কে সঠিক স্থানে রাখার জন্য যোনিপথে প্রবেশ করানো হয় । এটি বিভিন্ন আকার এবং আকৃতিতে আসে এবং সিস্টোসেলের ধরন এবং তার স্তর অনুসারে এটা লাগানো যেতে পারে। এটি ব্যবহার করা নিরাপদ এবং এটা কোনো ব্যথা সৃষ্টি করে না। এটি অস্ত্রোপচার বিহীন চিকিৎসার বিকল্প।

প্রস্রাবের অসংযম কী?

এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে প্রস্রাবের ধারা বেরিয়ে আসতে পারে, অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি না চাইলেও প্রস্রাব করে ফেলতে পারেন।

Avatar
Verified By Apollo Gynecologist
The content is verified by our experienced Gynecologists who also regularly review the content to help ensure that the information you receive is accurate, evidence based and reliable
Quick Appointment
Most Popular

কলপোস্কোপির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী?

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন রিং কি পৌরুষত্বহীনতার চিকিৎসা করতে পারে?

হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটার জুতো বাছাই করার সময় চারটি দিক মনে রাখা উচিত

ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার লক্ষণসমূহ যেগুলি আপনার বিবেচনা করা উচিত

Quick Book

Request A Call Back

X