3 মিলিয়ন ইউনিট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশে রক্তের ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে 3মিলিয়ন। 1.2 বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ আমাদের, তাও এটা লজ্জাজনক যে ভারত তার বার্ষিক 12 মিলিয়ন ইউনিট রক্তের লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারে না, প্রতি বছর মাত্র 9 মিলিয়ন ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। জনসচেতনতার অভাব, রক্তদান সম্পর্কে ভুল তথ্য এবং এটিকে ঘিরে প্রচলিত জল্পনা রক্তের স্বল্পতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু, এটি উৎসাহী রক্তদাতাদের থামিয়ে দিতে পারেনি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকি নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছেন এই মহান ব্রতে। এমনই একজন হলেন আর.কে.পাঠম।
আর.কে. প্রথম তাঁর কলেজ জীবন থেকে অসংখ্যবার রক্ত দান করে এসেছেন। তিনি বলেন যে, কতবার রক্ত দিয়েছেন তার গণনা রাখতে তিনি পছন্দ করেন না। তিনি যখন কলেজে ছিলেন তখন তিনি প্রথম রক্তদান করেছিলেন, কারণ তার বেশিরভাগ বন্ধুই এটি করেছিল এবং তাদের বিনামূল্যে পানীয় পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি রক্তদানের মাধ্যমে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন বা একটা বিশেষ তাৎপর্য তৈরি করছেন তা তিনি বুঝতে পারেননি। একটি ব্যক্তিগত দুঃখজনক ঘটনা তাকে এটির মূল্য উপলব্ধি করায়।
মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হওয়ার পর, প্রথমে অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ হিসেবে নয়াদিল্লিতে একটি ফার্মে কাজ শুরু করেন। একদিন, তিনি মাদ্রাজ থেকে ফোন পেলেন যে তাঁর বাবার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে এবং তাকে অবিলম্বে মাদ্রাজ চলে যেতে হবে। এটি 1990 সালের কথা, আর তখন তিনি বাড়ি ফেরার জন্য বিমানের টিকিট কেনার সামর্থ্য রাখতেন না। তিনি তার ম্যানেজারকে সমস্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং যদিও তিনি একজন সহযোগী ও সহমর্মী মানুষ ছিলেন কিন্তু তিনিও প্রথমকে বিমানে যাবার ব্যাপারে কোন সাহায্য করতে পারেননি। তবে, তিনি এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে প্রথম সেই রাতেই যেন তামিলনাড়ু এক্সপ্রেসে করে যেতে পারে।
পরের দিন সকালে পাঠম তাঁর বাবাকে করোনারি ডিজিজ বিভাগে খুঁজতে হাসপাতালে পৌঁছান। প্রথম অবশেষে তাঁর বাবাকে খুঁজে পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর বাবা নিজের স্বাস্থ্যের জন্য নয় বরং ভর পাশে থাকা রোগীর জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই রোগীর O+ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন ছিল এবং রক্তের অনুপলব্ধতার কারণে তার অপারেশন পিছিয়ে যাচ্ছিল। প্রথমের বাবা তাকে সকালের প্রাতঃরাশ করে ফিরে এসে রক্ত দিতে বললেন, কারণ তাঁরও O+ রক্তের গ্রুপও ছিল। পাঠম তাঁর বাবার অনুরোধ শুনে হতবাক হয়ে গেলেন। তাঁর তখন বাবার পাশ থেকে উঠে যাবার মতো মনের অবস্থা ছিল না, সেখানে প্রাতঃরাশ করতে যাওয়া দূরের কথা। কিন্তু, তাঁর বাবা অশ্রুসজল চোখে তার দিকে তাকিয়ে এটি করার জন্য বারবার জোর করেছিলেন। পিতার অবাধ্য হবার কোন ইচ্ছে না থাকায়, প্রথম অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিয়ে রক্তদান করেছিলেন। তিনি যখন ফিরে আসেন, ততক্ষণে তাঁর বাবা মারা গেছেন।
প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল তিনি রক্তদান করবেন এবং রক্তের স্বল্পতার কারণে যাতে কোনও ব্যক্তির মৃত্যু না হয়। তারপর থেকে, প্রথম তাঁর জন্মদিন, তাঁর স্ত্রীর জন্মদিন, তাঁর সন্তানদের জন্মদিন এবং অবশ্যই তাঁর বাবার জন্মদিন এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে নিয়মিত রক্তদান একরকম নিশ্চিত করেছেন। ভারতীয় রেড ক্রসের প্রতি তাঁর অবদান রক্তদানের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরো বেশি। তিনি তাঁর নিজস্ব সংস্থা সেফ ব্লাডের সহায়তায় ইন্ডিয়ান রেড ক্রসের জাতীয় সদর দফতরকে কম্পিউটার চালিত করতে সাহায্য করেছেন।
লোকেরা রক্তদান না করার জন্য যা সব অজুহাত দিয়ে থাকে, 15 বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁর অভিজ্ঞতায়, প্রথম এর ঝুলিতে এমন সব ধরনের অজুহাত মিলবে। যেমন- আমার মাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমি গাড়ি চালিয়ে যাবার পক্ষে খুব দুর্বল হয়ে যাবো, আমি সূঁচের ভয়ে ভয় পাই ইত্যাদি আরো অনেক। আর.কে. পাঠম বলেছেন, “এটা আমাকে বিস্মিত করে যে 1.2 বিলিয়ন জনসংখ্যার একটি দেশে, আমরা এখনও রক্তের প্রয়োজনীয়তার বার্ষিক মাপকাঠিতে থেকে পিছিয়ে আছি, যদিও রক্ত এমন একটি জিনিস যা দিলে আপনার বিশেষ কোন ক্ষতি হবে না এবং এটি 3 ঘন্টার মধ্যে পূরণ হয়ে যাবে। এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দান করা রক্ত মাত্র 35 থেকে 42 দিনের জন্য স্থায়ী হয়। রক্তের ভান্ডার পুনরায় পূরণ করার জন্য অবিরত প্রয়োজন থাকে এবং এটি শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে”।
নিরাপদ রক্তের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং রক্তদাতাদের স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে প্রতি বছর, বিশ্বজুড়ে 14ই জুন রক্তদাতা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ডব্লুএইচও ঘোষণা করেছে যে আরও স্বেচ্ছায় রক্তদানকে উৎসাহিত করতে এই বছরের ভাবনা হল “রক্ত আমাদের সকলকে সংযুক্ত করে রাখে”।
আমরা অ্যাপোলো হাসপাতালেও এই উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের যথাসাধ্য আয়োজন করে থাকি। অ্যাপোলো হাসপাতাল দ্বারা রক্তের সংযোগ হল একটি সামাজিক মাধ্যম, যা রক্তদাতা এবং প্রাপকদের একত্রিত করে। এখানে আপনি যে কোনো স্থানে থাকা রক্তদাতাদের জন্য অনুসন্ধান করতে পারেন এবং সরাসরি তাদের বার্তা পাঠেতে বা ইমেল করতে পারেন। এমনকি আপনি রক্তের জরুরি প্রয়োজনের জন্য তাদের টুইট বা সরাসরি ফেসবুকেও বার্তা পাঠাতে পারেন। আপনি অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের মতোই বন্ধুদের যোগ করতে পারেন এবং নিজের বন্ধুদের এবং বন্ধুদের বন্ধুদের মধ্যে রক্তদাতাদের সন্ধান করতে পারেন। অন্য কোনো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন বা সাধারণ পরামর্শের জন্য আপনি সর্বদা হোম কেয়ার সাক্ষাৎকারের অনুরোধ করতে পারেন বা আস্ক অ্যাপোলো-এর সাথে অনলাইনে একটি সাক্ষাৎকার বুক করতে পারেন।