সামগ্রিক ধারণা
জন্মের সময়, যৌন অঙ্গগুলির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে একটি শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। ট্রান্সজেন্ডার মহিলাদের তাদের যৌন অঙ্গের কারণে জন্মের সময় পুরুষ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তবে বয়স পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তারা অনুভব করতে পারে তাদের লিঙ্গ পরিচয় আলাদা (লিঙ্গ ডিসফোরিয়া)। এটা তাদের জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে কষ্টের কারণ হয়। বেশ কিছু ট্রান্সজেন্ডার মহিলারা তাদের মনের লিঙ্গ অসন্তোষ দূর করার জন্য মুখে নারীকরণের অস্ত্রোপচার করে থাকেন।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারে বিভিন্ন পদ্ধতির অনুসরণ করে পুরুষালী মুখের গড়নকে মেয়েলি রূপে পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চুলের রেখার সাহায্যে কপাল কমানো, ঠোঁটের আকার বড় করা, মুখের আকার উপরের দিকে উঠানো, পুনরায় আকার দেওয়া এবং চোয়াল ও চিবুকের আকারে পরিবর্তন।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার সম্পর্কে
অনেক মুখের বৈশিষ্ট্য লিঙ্গ পার্থক্য করতে সাহায্য করে, যেমন চোখ, চোয়াল, ভ্রু এবং গাল। অনেক ট্রান্সজেন্ডার মহিলা নিজেদেরকে সচ্ছন্দ এবং আরও আত্মবিশ্বাসী করতে মুখের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যান। মুখে নারীকরণের অস্ত্রোপচারে কসমেটিক অস্ত্রোপচারের একটি অংশ যুক্ত থাকে। এর মধ্যে অনেকগুলি পদ্ধতি রয়েছে:
১.ভ্রু উত্তোলন – মুখকে মেয়েলি করতে ভ্রু তোলা।
২. চুলের সারির অগ্রগতি – পুরুষালী চুলের চূড়ার অপসারণ ঘটিয়ে এটিকে সামনের দিকে আনা।
৩. চোয়াল এবং চিবুককে নতুন আকার দেওয়া – চোয়ালগুলিকে একটি মেয়েলি চেহারা দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা কারণ পুরুষের চোয়ালের আকার কিছুটা বর্গাকার হয়।
৪. আড্যামস আপেলের আকার পরিবর্তন করা – পুরুষদের একটি বিশিষ্ট অ্যাডামস আপেল থাকে, তাই এটি আকারে ছোট হয়।
৫. রাইনোপ্লাস্টি – একটি নাকের সার্জারি যা নাককে পাতলা এবং তীক্ষ্ণ করে।
৬. গাল বৃদ্ধি – গাল পুনঃথাপন গালকে একটি মেয়েলি চেহারা দেয়।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারের জন্য যোগ্য কারা?
সবাই ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার করাতে পারে না। এই অস্ত্রোপচারের জন্য কে যোগ্য হতে পারে তা নির্ধারণ করার নিম্নলিখিত কিছু কারণ রয়েছে:
১.শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকতে হবে।
২. আপনি অবশ্যই লিঙ্গ অসন্তুষ্টতার ব্যাপারটি নির্ণয় করেছেন।
৩. আপনি অবশ্যই রক্তপাতের ব্যাধি, রক্ত জমাট বাঁধা, হৃদরোগ বা কিডনি রোগের মতো উল্লেখযোগ্য রোগে ভুগবেন না।
৪. আপনার বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
৫. আপনাকে অবশ্যই কসমেটিক সার্জারির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বুঝতে হবে।
৬. আপনার শরীরের স্বাভাবিক লিপিড প্রোফাইল, রক্তের সংখ্যা, রক্তে শর্করা, এনজাইম এবং ইলেক্ট্রোলাইট থাকতে হবে।
৭. আপনাকে অবশ্যই অত্যাধিক পরিমাণে অ্যালকোহল, ড্রাগ ও তামাকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার কিভাবে করা হয়?
এটি ১৮ বছরের বেশি বয়সী ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের উপর করা হতে পারে। প্রক্রিয়াটি করার আগে আপনাকে একজন অভিজ্ঞ এবং সার্টিফায়েড সার্জনের সাথে পরামর্শ করতে হবে। আপনার সার্জেন আপনি কি ধরনের মুখের বৈশিষ্ট্য চাইছেন তা নিয়ে জানতে চাইবেন এবং তারপরে তার ফলাফলগুলি বর্ণনা করবেন।
শারীরবৃত্তীয় তথ্য পেতে, আপনাকে একটি সিটি স্ক্যান করতে হবে। অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে বেশ কয়েকটি ফটোগ্রাফ তোলা হবে। আপনার সার্জন আপনাকে অস্ত্রোপচারের আগে ওষুধ, খাওয়া এবং পান করার ধরণ সম্পর্কে একটি নির্দেশিকা প্রদান করবে। আপনার স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণগুলি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করার পরে আপনি মুখে নারীকরনের অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যাবেন। এর মধ্যে এই অস্ত্রোপচারগুলি রয়েছে:
১. ব্লেফারোপ্লাস্টি – এর মাধ্যমে অতিরিক্ত কলা কেটে চোখ ও চোখের পাতার পরিবর্তন করা হয়।
২. কপালের আকার পরিবর্তন করা – মহিলাদের উঁচু এবং মসৃণ কপাল হয়। কপালের হাড় কেটে এবং পুনরায় আবার তাকে আকার দেওয়া হয় এবং মেয়েলি আকৃতির জন্য আবার তাকে পেছনদিকে বসানো হয়।
৩. রাইনোপ্লাস্টি – এর মাধ্যমে নাকের আকার কমিয়ে আরো পাতলা করা হয়।
৪. ঠোঁটকে উঁচু করা এবং বাড়ানো – ফাইলার এবং প্রতিস্থাপনের সাহায্যে, উপরের ঠোঁট এবং নাকের গোড়ার মধ্যে দূরত্ব কম করা হয়।
৫. গাল বৃদ্ধি – মহিলাদের গাল গোলাকার হয়, তাই প্রতিস্থাপনের সাহায্যে, চর্বিযুক্ত কলাগুলি গালে যোগ করা হয় যাতে তারা আরও মেয়েলি দেখায়।
৬. জিনিওপ্লাস্টি – এর মধ্যে রয়েছে একটি মুখকে আরও মেয়েলি করার জন্য চিবুককে কাটা, পুনর্নির্মাণ এবং পুনরায় সংযুক্ত করে চিবুক সংকুচিত করা এবং ছোট করা।
৭. চোয়াল কমানো – যেহেতু মেয়েদের চোয়ালটা ছোট হয় তাই এটিকে কেটে এবং সরু করে ছোট করা হয়।
৮. চুল প্রতিস্থাপন – পুরুষরা তাদের কপাল থেকে চুল পড়ে যাওয়া অনুভব করতে পারে তাই চুলের সারি লাগিয়ে একটি মেয়েলী আকার দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এর মাধ্যমে।
৯. অ্যাডামস আপেলের তরুণাস্থি কমিয়ে এবং পুনরায় আকার দেওয়া।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারের পর
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার করার পর, আপনি আপনার মুখের যে অংশে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তাতে লালভাব, ফোলাভাব এবং ব্যথা অনুভব করতে পারেন। আপনি অবশ্যই কিছু হালকা ব্যায়াম করবেন আগামী ছয় মাস। আপনার ডায়েট সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করতে হবে কারণ মুখের নারীকরণ অস্ত্রোপচারের পরে চিবানো এবং গিলতে বাধা হতে পারে। অস্ত্রোপচারের পরে সেলাই করা অঙ্গ এবং ব্যান্ডেজের যত্ন নিতে হবে।
সুবিধা
লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচার অপরিহার্য। এটি ট্রান্সজেন্ডার নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সাহায্য করে। আপনি মুখে নারীকরণের অস্ত্রোপচারের এক বছর পর একটি স্থায়ী ফলাফল দেখতে পাবেন। আপনি আপনার বিশেষজ্ঞের সাথে আরও পরবর্তী চিকিৎসা এবং মুখের বৈশিষ্ট্যগুলির বিবর্তন সম্পর্কে কথা বলতে পারেন।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি বা জটিলতা
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার সাধারণত একটি নিরাপদ পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে অন্যান্য অস্ত্রোপচারের মতো এটির সাথে এখনও কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে:
- অত্যাধিক রক্তপাত
- সংক্রমণ
- মুখের অসমতা
- এনেস্থিসিয়ার বিপরীত অবস্থা
- কাট বরাবর সেলাই ফেটে যাওয়া
- দাগ
- মুখের অন্যান্য অংশের ক্ষতি
- সেরোমা (ত্বকের নিচে তরল জাতীয় পদার্থ জমা হওয়া)
- রক্ত জমাট বাধা
- মুখের স্নায়ুতে আঘাত
উপসংহার
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার ট্রান্সজেন্ডার মহিলাদের জন্য তাদের মেয়েলি মুখের চরিত্রগুলিকে উন্নত করতে উপকারী। এই অস্ত্রোপচারে বিভিন্ন ধাপের পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভ্রু, গাল এবং ঠোঁট তোলা, চিবুক সরু করা, রাইনোপ্লাস্টি এবং আরও অনেক কিছু। আপনাকে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে এবং অস্ত্রোপচারের পরে আপনার সার্জন যে সমস্ত নির্দেশগুলি দেবেন তার অনুসরণ করতে হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ( FAqs)
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার কি খুব কষ্টদায়ক?
অনেক রোগী বলেছেন যে অস্ত্রোপচারটি একেবারেই কষ্টদায়ক নয়। এটি মাথাব্যথা বা হ্যাংওভারের চেয়ে খারাপ নয় । আপনার চিকিৎসক আপনাকে ব্যথানাশক এবং বেদনানাশক ওষুধ লিখে দেবেন যা আপনাকে যে কোনো অস্বস্তিতে সাহায্য করবে।
মহিলারাও কি ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারটি করাতে পারেন?
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি হল প্লাস্টিক এবং ক্র্যানিওফেসিয়াল সার্জিক্যাল পদ্ধতির একটি গঠন যা পুরুষালি মুখের বৈশিষ্ট্যগুলিকে নতুন আকার দিতে পারে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা সাধারণত এই চিকিৎসা করে থাকেন, তবে হ্যাঁ, এটি মহিলারাও বেছে নিতে পারেন।
আমার মুখটি আরো কিভাবে মেয়েলি হতে পারে?
মহিলাদের , গালগুলি পুরুষদের থেকে বেশি বিশিষ্ট, গোলাকার এবং পূর্ণ হয়। পুরুষদের মধ্যে, গালগুলি তীক্ষ্ণ, কৌণিক এবং মুখের উপর চ্যাপ্টা হয়ে থাকে।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারের জন্য কি কোন বিমার সুবিধা থাকে?
না, এই অস্ত্রোপচারের জন্য কোন বীমার সুবিধা থাকে না যেহেতু এটি একটি কসমেটিক অস্ত্রোপচার হিসেবে গণ্য হয়।
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচার কি বিপজ্জনক হতে পারে?
ফেসিয়াল ফেমিনাইজেশন অস্ত্রোপচারের সাথে কিছু ঝুঁকি রয়েছে যেমন রক্তপাত, সংক্রমণ, সেলাই এর ধীরে ধীরে সেরে ওঠা, হাড়ের নিরাময়ে ব্যর্থতা, দীর্ঘস্থায়ী ফোলা এবং চুল পড়া।