বর্তমানে ভারতের শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি একই। বছরের যে কোনো সময় আপনার সাধারণ ঠাণ্ডা লাগতে পারে! মানুষ এক সময় কেবল শীতকালেই ঠাণ্ডা লাগার সমস্যায় ভুগত। এখন সেই দিন চলে গেছে। শহরের পরিবেশ দূষণ হোক বা আবহাওয়ার পরিবর্তিত ধরণের জন্য হোক, আমাদের এখন প্রতি বছরে অন্তত তিন বার ঠাণ্ডা লাগতেই থাকে! আমাদের দেশের বেশী জনসংখ্যা যুক্ত অঞ্চলগুলি এর সংক্রমণের জন্য দায়ী।
কিন্তু প্রায়শই মানুষ সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা ও ফ্লুকে গুলিয়ে ফেলেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই ফ্লুতে ভুগি কিন্তু এটিকে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা বলি। আবার এর উলটো ঘটনাও ঘটতে পারে। আমাদের এই দুটি রোগের সাদৃশ্য নিয়ে একটি অস্পষ্ট ধারণা আছে। কিন্তু আমরা জানি না যে এগুলির বৈসাদৃশ্যগুলি কী কী।
আমাদের হাঁচি, কাশি এবং জ্বর জ্বর ভাবের মত বেশ কিছু অদ্ভুত অনুভূতি হয়, কিন্তু আমরা জানি না যে এটি সাধারণ ঠাণ্ডা না ফ্লু। বস্তুত, সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার সঙ্গে তুলনা করতে গেলে দেখা যাবে যে ফ্লু- এর এমন অনেকগুলি উপসর্গ রয়েছে যা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার থেকে অনেক আলাদা। তাই সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা এবং ফ্লু এর মধ্যকার পার্থক্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফ্লু সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক রোগ এবং যদি এটিকে চিকিৎসা না করা যায় তবে এটি যথেষ্ট ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
তাই আসুন আমরা এটি গভীরভাবে বুঝি এবং সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা এবং শুরু এর মধ্যকার ধোঁয়াশা গুলিকে এর উপসর্গ থেকে শুরু করে চিকিৎসা ও রোগের পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে পরিষ্কার করে জানি।
ঠাণ্ডা লাগা কী?
ঠাণ্ডা লাগাকে সাধারণত একটি মাঝারি শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুখ বলে চিহ্নিত করা হয় এবং একজন ব্যক্তি এটি থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে উঠতে পারেন। এটিকে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা বলা হয় তার কারণ এটি ঋতুকালীন শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এটা খুব বেশি হলে দুই সপ্তাহের জন্য থাকে এবং সাধারণত এর কারণে কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা দেখা যায় না।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার সঙ্গে প্রায় 100টি ভাইরাস যুক্ত আছে, যাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো রাইনো ভাইরাস। যদি আপনার হাঁচি কাশি এবং নাক সুড়সুড় করে, তবে খুব সম্ভবত তা রাইনো ভাইরাসের কারণে ঘটেছে। চারপাশের পরিবেশের আর্দ্রতা কম পরিমাণে থাকলে এই ঠাণ্ডা লাগা সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলি পরিবেশে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর মানে এই নয় যে অন্য কোনো অবস্থায় আপনার ঠাণ্ডা লাগবে না।
ঠাণ্ডা লাগার উপসর্গ:
● গলা ব্যথা।
● নাকের নানা রোগ যেমন নাক দিয়ে জল পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
● কাশি।
● সারা দেহে ব্যথা।
●ক্লান্তি।
● হাঁচি।
যদিও সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার উপসর্গগুলি এক সপ্তাহের জন্য থাকে, তবুও একজন ব্যক্তিকে প্রথম তিন দিন খুবই যত্নবান থাকতে হবে, কারণ ওই সময়ে এই রোগটি অন্যদের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। যেহেতু সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা প্রকৃতিগত দিক দিয়ে একটি সংক্রামক রোগ, তাই যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণগত কারণে ঠাণ্ডা না লেগে থাকে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া কখনই উচিত নয়।
উপসর্গগুলি থেকে আরাম পাওয়ার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। আরামের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, ডিকনজেসটেন্ট এবং এনএসএআইডি দেওয়া হয়। জলশূন্যতা এড়ানোর জন্য একজন রোগীকে নিজেকে সর্বদা আর্দ্র রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা হলো এমন একটি রোগ যাকে সহ্য করতে হবে এবং একে সারিয়ে তোলা যাবে না। তার মানে কখনোই এই নয় যে একজন ব্যক্তিকে সবসময় দিতে কষ্ট পেয়ে যেতে হবে। যদি ঠাণ্ডা লাগা অত্যন্ত জেদী হয় এবং কিছুতেই না সারে, তবে ব্যক্তিকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। উক্ত রোগীর যে কোনো ধরনের অ্যালার্জি থাকতে পারে, তিনি সাইনাসাইটিস এবং স্ট্রেপ থ্রোটের মত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ভুগতে পারেন। যদি কাশি একেবারেই না কমতে চায় তবে অ্যাজমা বা ব্রংকাইটিসের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এই উপসর্গগুলি থেকে কিছুটা আরাম দেওয়ার জন্য অনেক ঘরোয়া টোটকা আছে। কিন্তু যদি এক সপ্তাহের মধ্যে এই ঠাণ্ডা লাগা না কমে তবে ব্যক্তিকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। এছাড়া আপনি অ্যাপোলো হসপিটালসের বিখ্যাত চিকিৎসকদের সঙ্গে এখন অনলাইনে পরামর্শ করতে পারেন।
ফ্লু কী?
একটি সাধারণ ফ্লুয়ের উপসর্গগুলি সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার উপসর্গের তুলনায় অনেক বেশি ভয়ানক হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে পরিচিত একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ আছে, যা একটি অত্যন্ত সংক্রামক শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগ। অনেক রকম ফ্লু আছে। ভাইরাসটি নাক, চোখ এবং মুখের মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে।
নানা ধরনের ফ্লুয়ের ভাইরাস আছে, যার মধ্যে কিছু কিছু অত্যন্ত বিপজ্জনক। মনুষ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এ এবং বি এর কারণে ঋতুকালীন অসুস্থতা ঘটে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে মাঝারি মানের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সংক্রমণ হতে পারে। এটি প্রকৃতিগত দিক থেকে মহামারীর মত নয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ব্যাপারে একটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যে এটি থেকে যে নতুন স্ট্রেনগুলির জন্মায়, তার কারণে মহামারী দেখা দিতে পারে।
আরো বেশ কিছু গুরুতর ভাইরাস আছে যেটি মানুষ নয়- এরকম উৎস থেকে আসে। এভিয়ান (বার্ড) ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, কুকুরের ফ্লু, ঘোড়ার ফ্লু। এই সমস্ত ফ্লুয়ের ভাইরাসগুলির মধ্যে কিছু কিছু স্ট্রেইন মানব দেহ ছড়িয়ে যেতে পারে এবং এর কারণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সোয়াইন ফ্লু এবং এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাস কী ধরনের ভয়াবহতা বিস্তার করেছিল, তার সম্পর্কে আপনারা অনেকেই ভালোভাবে জানেন।
ফ্লুয়ের বেশ কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো:
● শুকনো কাশি।
● বেশি জ্বর।
● গলাব্যথা।
● শিরশিরানি ঠাণ্ডা।
● শরীরে প্রচন্ড ব্যথা।
● নাক দিয়ে জল পড়া অথবা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
● মাথাব্যথা।
● ক্লান্তি।
ফ্লুয়ের চিকিৎসা:
ডাক্তাররা টামিফ্লু, রেলেঞ্জা এবং র্যাপিভাবের মত অ্যান্টিভাইরাস খেতে পরামর্শ দেন। এছাড়া ডাক্তার প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ পান করতে বলবেন এবং অনেক বিশ্রাম নিতে বলবেন। ব্যথা উপশমকারী ওষুধের জন্য ডাক্তার ডিকঞ্জেস্ট্যান্ট ওষুধও খেতে বলতে পারেন। মনে রাখবেন, এই ওষুধগুলি কেবল মাত্র একজন ডাক্তারের পরামর্শ পেলে তবে খাওয়া উচিত।
কখন ডাক্তার দেখাতে যাবেন?
যে সব ব্যক্তিদের ফ্লুয়ের উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে এবং তাদের সাথে সাথে ডায়ারিয়া এবং বমি হচ্ছে, তাদের অতি সত্ত্বর একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ফ্লু যেহেতু নিউমোনিয়ার দিকে মোড় নিতে পারে, তাই যত শীঘ্র সম্ভব একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। গর্ভবতী মহিলা, পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি এবং দুই বছরের নিচে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যদি উপসর্গ দেখা যায়, তবে তৎক্ষণাৎ তাদের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
যে কোন ব্যক্তির যদি ফ্লু এর উপসর্গ থাকার পাশাপাশি শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, অত্যন্ত গলা ব্যথা থাকে, বুকের মধ্যে অস্বস্তি হয় এবং কথা বলতে সমস্যা হয়, তবে তৎক্ষণাৎ তাদের একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
এখন আপনি অ্যাপোলো হসপিটালের শ্রেষ্ঠ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানদের সঙ্গে অনলাইনেই যোগাযোগ করতে পারবেন। অনুগ্রহ করে একটি অনলাইন পরামর্শ পাবার জন্য এখানে একটি সাক্ষাৎকার বুক করুন।