যদি আপনি আপনার ত্বকে হলুদের কোন চোখ দেখতে পান অথবা আপনার চোখের সাদা অংশে হলুদ ছোপ দেখতে পান, তবে একে অবহেলা করবেন না। জন্ডিসের জন্য নিজের চিকিৎসা করান।
জন্ডিস কী?
জন্ডিস হলো অতিরিক্ত উচ্চমাত্রায় বিলিরুবিনের (বাইলের একটি হলদেটে রঞ্জক, বাইল হল যকৃৎ দ্বারা নির্মিত একটি তরল পদার্থ) কারণে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ এবং মিউকাস মেমব্রেনের প্রায় হলদেটে হয়ে যাওয়া। রক্তে কত পরিমাণে বিলিরুবিন আছে, তার উপর নির্ভর করে ত্বকের রঙ নির্ধারিত হয়। যদি বিলিরুবিনের মাত্রা সামান্য বাড়ে, তবে অথবা চোখের সাদা অংশ কিছুটা হলদেটে হয়ে যায়। যদি এর মাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যায়, তবে সাধারণত এগুলি কিছুটা বাদামী রঙের হয়ে যায়।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে জন্ডিস নিজে কখনোই একটি রোগ নয়, কিন্তু এটি অন্তর্নিহিত রক্ত সংক্রান্ত অথবা যকৃৎ সংক্রান্ত রোগের একটি উপসর্গ হতে পারে।
কী কারণে জন্ডিস হয়?
যকৃতের অন্যতম প্রধান কাজ হলো বিলিরুবিনকে অপসারণ করা। প্রতিদিনের লোহিত রক্ত কণিকার ভেঙে যাওয়ার পর তৈরি হওয়া উপজাত পদার্থ হল বিলিরুবিন। যকৃত রক্তপ্রবাহ থেকে যখন বিলিরুবিনকে অপসারিত করতে পারে না, পরিপাক করে এবং বাইরে বাইল আকারে রেচিত করে, তখন জন্ডিস দেখা যায়।
তাই, জন্ডিস নিম্নলিখিতগুলির ইঙ্গিত হতে পারে:
- যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া, যার ফলে এটি বিলিরুবিনকে অপসারিত করতে এবং দূর করতে পারেনা।
- বাইরের নালীগুলির অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়া (ক্যান্সার, গলস্টোন অথবা বাইল নালীর প্রদাহের কারণে বাইল নালীগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে)।
- রক্তে প্রচুর পরিমাণে বিলিরুবিন উৎপন্ন হচ্ছে, যাকে রক্ত থেকে সরানো যকৃতের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। (উদাহরণস্বরূপ, ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে যখন লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তখন খুব উচ্চ পরিমাণে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়)।
কোন রোগের কারণে জন্ডিস হয়?
বহু সংখ্যক সাধারণ রোগের কারণে বিলিরুবিন উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে। যে যে রোগগুলি জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে, তা হল হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, অ্যালকোহলিক লিভার জনিত রোগ এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার। কিছু ওষুধের কারণেও জন্ডিস হতে পারে। যে ওষুধগুলি যকৃত দ্বারা পাচিত হয়, এটি তার ফলাফল হিসেবেও ঘটতে পারে।
জন্ডিসের উপসর্গ:
- ত্বক, জিহ্বা এবং চোখের সাদা অংশে হলুদ ছোপ
- গাঢ় হলুদ রঙের মূত্র
- মাটির রঙের এবং দুর্গন্ধ যুক্ত মল
- যকৃতে তীব্র ব্যথা
- খিদে কমে যাওয়া
- নাড়ির স্পন্দন কমে যাওয়া
- গা গোলানো, তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য, অত্যন্ত দুর্বলতা
- গায়ে চুলকানি, মুখে তেতো ভাব
- জ্বর, মাথাব্যথা
- ভীষণ ক্লান্তি
জন্ডিসের প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা
জন্ডিস প্রতিরোধ করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে:
- হেপাটাইটিস বি এর বিরুদ্ধে নিজের টীকাকরণ করান
- স্বাস্থ্যকর জায়গায় খান, বিশেষ করে যেখানে উদ্যোক্তারা দস্তানা পরে কাজ করেন
- সীমিত পরিমাণে মদ্যপান
- সুরক্ষিত যৌন সঙ্গম, কারণ যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি সঞ্চারিত হয়।
যেমনটা আগে বলা হয়েছে, জন্ডিস নিজে একটি রোগ হওয়ার থেকেও বেশি করে অন্য রোগের ইঙ্গিত বেশি দেয়। তাই যদি আপনি জন্ডিস সন্দেহ করে থাকেন, তবে একজন ডাক্তার দেখান। এই চিকিৎসায় জন্ডিস সৃষ্টি হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত খুব হালকা খাদ্যাভ্যাস, যাতে প্রচুর ফল এবং সবজি রয়েছে, প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ, যেমন ফলের রস, নারকেলের জল এবং বাটার মিল্ক খাওয়ার সুপারিশ দেওয়া হয় যাতে আপনার যকৃৎকে কিছুটা ভারমুক্ত করা যায়।
সাবধান! জন্ডিস!
যদি জন্ডিস ধরা পড়ে, তবে সুস্থ হবার পর কিছু মাসের জন্য মদ, ভাজাভুজি বা ভারি খাবার খাবেন না, নতুবা আপনার নতুন করে ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।