একটি প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎ ভয়, অতিরিক্ত আবেগ এবং সাধারণ, স্বাভাবিক ও বিপজ্জনক নয়, এমন অবস্থায় হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাকের সময় একজন ব্যক্তির প্রচন্ড ঘাম হতে পারে এবং তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। তাদের অনুভব হতে থাকে যে তাদের একটি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
যে কোন ব্যক্তিরই প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে নিম্নলিখিত কিছু বিষয়ের জন্য প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে:
- লিঙ্গ: পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্যানিক অ্যাটাক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- বয়স: সমস্ত বয়সের মানুষদের প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। যদিও প্রৌঢ় বয়সের শুরুর দিকে প্রথম প্যানিক অ্যাটাক অনুভূত হতে পারে।
প্যানিক এবং দুশ্চিন্তা সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার গুলির শ্রেণীবিভাগ – কী করে পার্থক্য নিরূপণ করা যায়?
- প্যানিক অ্যাটাক খুবই এবং তীব্র সময় অথবা অনুভূতির সময় যা খুবই কম সময়ের মধ্যে প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়এগুলি নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্ততপক্ষে চারটে সঙ্গে যুক্ত:
- ঘামা
- বুক ধড়ফড় করা
- হঠাৎ করে প্রচন্ড ভয়
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- বুকে ব্যথা
- শ্বাস আটকে আসা
- মরে যাওয়ার ভয়
- হাত পা কাঁপা
- গরম অনুভব হওয়া বা ঠাণ্ডা অনুভব হওয়া
- মাথা ঘোরানো
- গা বমি বমি করা
- হাত এবং পা অথবা সারা দেহ অসাড় হয়ে থাকা অথবা শিরশির করা
- ডি-রিয়ালাইজেশন (সকলের থেকে দূরে চলে যাওয়ার অনুভূতি)
প্যানিক ডিজঅর্ডার এবং প্যানিক অ্যাটাক একই বিষয় নয়। প্যানিক ডিজঅর্ডার এর মধ্যে বারবার প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে। এই অ্যাটাকের মধ্যে একটি ভবিষ্যতে আরও প্যানিক অ্যাটাক হবার একটি ক্রমাগত ভয় থাকে এবং সাধারণত যে যে ঘটনাগুলি প্যানিক অ্যাটাকের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে অথবা বিগত দিনের প্যানিক অ্যাটাকগুলিকে মনে করিয়ে দিতে পারে, সেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া থাকে। অন্যান্য যে যে কারণগুলির জন্য প্যানিক অ্যাটাক হবার সম্ভাবনা থাকে:
- হার্ট অ্যাটাক
- সোশ্যাল ফোবিয়া
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া
- পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পি এস টি ডি)
- আগোরাফোবিয়া (পালিয়ে যেতে না পারার ভয় যেমন ভিড়ের মধ্য থেকে একটি উড়োজাহাজে ওড়ার সময়)
- মাইট্রাল ভালভের স্থানচ্যুতি
- হাইপার থাইরয়েডিজম
2. জেনারেলাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার হল একটি প্রচন্ড অবাস্তব চিন্তা যা অন্তত ছয় মাস ধরে চলতে থাকে। এটি নিম্নলিখিত অন্তত তিনটি উপসর্গের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত:
- পেশিতে টান
- ক্লান্তি
- চরিত্রের গঠন পরিবর্তন হওয়া যেমন আগের থেকে কম সামাজিক হওয়া
- মনোনিবেশ করতে সমস্যা
- ঘুমে ব্যাঘাত
- অস্থিরতা
- খিটখিটে ভাব অথবা অত্যন্ত রাগ
3. ফোবিয়া ডিজঅর্ডার হলো কিছু জিনিসের (যেমন পোকা, রক্ত) অথবা পরিস্থিতি (যেমন জনসমক্ষে কথা বলা, উচ্চতা)-র প্রতি অত্যন্ত বেশি ক্রমাগত এবং পুনরাবৃত্ত ভয়। এই সমস্ত জিনিস বা পরিস্থিতির সংস্পর্শে এলে ব্যক্তির প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উদাহরণ হল, আগরাফোবিয়া এবং সোশ্যাল ফোবিয়া।
4. পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার একগুচ্ছ মানসিক প্রতিক্রিয়ার শ্রেণী। এই প্রতিক্রিয়াগুলি নিম্নলিখিতগুলির সমাহার হতে পারে:
- প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার মত পরিস্থিতি যেমন ভূমিকম্প, বন্যা, আগুন, দুর্ঘটনা অথবা মৃত্যু
- এমন কিছু অভিজ্ঞতা যা কোনো ব্যক্তিকে নিজের বা অন্য ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়
এই ট্রমাটিক পরিস্থিতিগুলি একজন ব্যক্তির স্বপ্নে অথবা চিন্তা ভাবনায় আসতে পারে। আতঙ্কের অনুভূতি, অসহায়তা এবং ভয়ের মাধ্যমে এই পরিস্থিতিগুলি পুনরায় অনুভব করা যায়। সাধারণ ব্যবহারগুলির মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত:
- অতি সতর্ক হয়ে থাকা (আপনি আপনার আশেপাশে কি ঘটছে তা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেন)
- ঘুমোতে সমস্যা হওয়া
- কমে যাওয়া আবেগ (যেমন প্রেমময় অনুভূতি বা ভবিষ্যতের জন্য আকাঙ্ক্ষা) সহ বিষণ্ণতা এবং সর্বনাশের সাধারণ অনুভূতি অনুভব করা
- পুরোনো ঘটনা মনে পড়ে যায় এমন মানুষ, কার্যকলাপ অথবা স্থানগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া
- মনোনিবেশে অসুবিধে
প্যানিক অ্যাটাকের কারণ গুলি কি কি?
বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে প্যানিক অ্যাটাকের অন্তর্নিহিত কারণ বিভিন্ন হয় এবং এটিকে একটি নির্দিষ্ট সাধারণ বিষয়ে দিয়ে কখনই নির্ধারিত করা সম্ভব নয়। যদিও বিশ্লেষণ করা হয় যে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র একটি প্রদত্ত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ অথবা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বারবার প্যানিক অ্যাটাক হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে নিম্নলিখিত কারণ গুলি হল:
- মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা – যে সমস্ত লোকদের ডিপ্রেশন মানসিক অসুস্থতা এবং অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার আছে তাদের প্যানিক অ্যাটাক হবার সম্ভাবনা বেশি
- পারিবারিক ইতিহাস – প্যানিক ডিজঅর্ডারের কাহিনী প্রধানত পরিবারেই নিহিত থাকে
- কোন বস্তুর অপব্যবহার জনিত সমস্যা – ড্রাগের নেশা এবং মদ্যপান প্যানিক অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়
প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎ করে হতে পারে এবং এটি ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগে। প্যানিক অ্যাটাকের উপসর্গগুলি ঘটনার প্রায় 10 মিনিট পর থেকে দৃশ্যমান হয়। যদিও যখন একবার এই ভয়ের অনুভূতিটি কেটে যায়, তখন এই উপসর্গগুলো দূর হয়ে যায়।
প্যানিক ডিজঅর্ডার নির্ণয় করা হয় কিভাবে?
বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা যেমন হৃদপিন্ডের সমস্যা, শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা এবং থাইরয়েড রোগের কারণে প্যানিক অ্যাটাকের মতো উপসর্গ দেখা যায়। অসুস্থতার যথার্থ কারণ বোঝার জন্য চিকিৎসককে কিছু পরীক্ষা করতে হবে। তখন চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখবেন যে সেই উপসর্গগুলি একটি শারীরিক সমস্যা না প্যানিক অ্যাটাকের জন্য হচ্ছে।
বারবার প্যানিক অ্যাটাকের কিছু সাধারণ বিষয় হলো নিম্নরুপ:
- আরো বেশী প্যানিক অ্যাটাক হবার চিন্তা করা অথবা এর ফলাফলের কথা চিন্তা করা
- ব্যবহারের পরিবর্তন করা যাতে এমন সমস্ত পরিস্থিতিকে এড়ানো যায় যার জন্য একটি প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে
- প্যানিক অ্যাটাকের সময় নিয়ন্ত্রণ হারানোর ব্যাপারে ভাবা
প্যানিক অ্যাটাকের সঙ্গে যুক্ত জটিলতা গুলি কী কী?
প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসা করার জন্য সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় মানুষ দ্বিধাবোধ করেন। কিন্তু প্যানিক অ্যাটাককে খুব সহজেই চিকিৎসা করা যায়। যদি প্যানিক অ্যাটাক বা ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং এর ফলে অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসা করা হয়?
প্যানিক অ্যাটাক কমানো এবং তার পরে এটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু কার্যকরী চিকিৎসা বিকল্প রয়েছে। প্যানিক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা করার জন্য ওষুধ, সাইকোথেরাপি এবং এই দুটির সমন্বয়ই এর চিকিৎসার বিকল্প:
- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট –কিছু কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ প্যানিক অ্যাটাকের ঘন ঘন প্যানিক হওয়াকে কমিয়ে দেয় এবং এর তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
- সাইকোথেরাপি – কথা বলা থেরাপি অথবা বৌদ্ধিক ব্যবহার সংক্রান্ত থেরাপি হলো সাইকোথেরাপির ধরণ, যাতে চিকিৎসক একজন রোগীর চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিগুলি নিয়ে আলোচনা করেন। চিকিৎসক সম্ভাব্য বিষয়গুলিকে চিহ্নিত করেন এবং কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে আপনাকে সেগুলি থেকে বার করে আনার চেষ্টা করেন। যে পরিস্থিতিগুলি প্যানিক অ্যাটাক সৃষ্টি করত, এই কাউন্সিলিংগুলি আপনাকে সেগুলোর প্রতি একটি পৃথক ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করবে।
- উদ্বেগ বিরোধী ওষুধ –প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসা করার জন্য এবং এর প্রতিরোধ করার জন্য ডাক্তারদের সবচেয়ে বেশি সুপারিশ করা ওষুধ হলো বেনজোডায়াজেপিনস।
চিকিৎসার সময়কাল ডিজঅর্ডারের তীব্র তার ওপর নির্ভর করে এবং রোগী এতে কতটা ভালো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তার উপরে নির্ভর করে।
প্যানিক অ্যাটাকের সময় হার্ট অ্যাটাকের মতনই অনুভূতি হয়। যদিও দেখা গেছে যে প্রায় সমস্ত প্যানিক অ্যাটাকই প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। যেখানে একটি হার্ট অ্যাটাক আরো বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। যদি আপনি একটি প্যানিক অ্যাটাকের উপসর্গ লক্ষ্য করেন, তবে তৎক্ষণাৎ আপনার নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
প্যানিক অ্যাটাক আটকানোর জন্য কী করা যেতে পারে?
আপনার সাইকোথেরাপি সেশনের সময় ডাক্তার আপনাকে বিভিন্ন পরিস্থিতির প্রতি সাড়া দিতে সাহায্য করবেন, যেগুলি আপনার প্যানিক অ্যাটাক হওয়াকে আরো বেশি উত্তেজিত করতে পারে এবং তিনি প্যানিক অ্যাটাক আটকানোর জন্য ওষুধ দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি প্যানিক অ্যাটাক হবার কমানোর জন্য নিম্নলিখিত কাজ গুলি করতে পারেন:
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা.
- ক্যাফেইন কম পরিমাণে খাওয়া
- যে কোন প্রকার প্রতিরোধী বিকল্প খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা
- একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
প্যানিক ডিজঅর্ডার নিয়ে মানুষ কী করে বেঁচে থাকেন?
প্যানিক অ্যাটাকের চিকিৎসা আপনাকে একটি ভয় মুক্ত জীবন যাপন করতে এবং উপভোগ করতে সাহায্য করে। পেশাদারদের সাহায্য এবং চিকিৎসা নিয়ে প্রায় অধিকাংশ মানুষই প্যানিক অ্যাটাক থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সঠিক সময়ে চিকিৎসাগত সাহায্য পেলে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। যেমন কিছু প্যানিক অ্যাটাকের হার্ট অ্যাটাকের মত শারীরিক উপসর্গ আছে। তাই এই সমস্ত ক্ষেত্রে চিকিৎসাগত সাহায্য খুবই প্রয়োজন এবং যদি আপনি নিম্নলিখিতগুলি অনুভব করেন তবে তৎক্ষণাৎ আপনার চিকিৎসকের সাহায্য যাওয়া উচিত:
- প্রাত্যহিক জীবনে প্রচন্ড দুশ্চিন্তা
- কাজের সময় মনোনিবেশে অসুবিধা
- অ্যাগোরাফোবিয়া (ঘর ছেড়ে জন সমৃদ্ধ অঞ্চলে যাওয়ার ভয়)
- স্লিপ ডিজঅর্ডার
- ভীষণ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- যে প্যানিক অ্যাটাকের উপসর্গগুলি 10 মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে
উপসংহার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্যানিক অ্যাটাক অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং অস্বস্তিকর হতে পারে, শারীরিক এবং মানসিক- দুই ভাবেই। এটি আপনার নিত্যদিনের কার্যকলাপকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনাকে এড়ানো যায়। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়ানি, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং দুর্বলতার মত উপসর্গগুলিকে নিজে থেকে দুশ্চিন্তার লক্ষণ হিসেবে ধরে নেওয়া উচিত নয়; এগুলিকে একজন ডাক্তারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা উচিত।