বাড়িGastro Careঅ্যাপেন্ডিসাইটাইস সম্পর্কে সমস্ত কথা

অ্যাপেন্ডিসাইটাইস সম্পর্কে সমস্ত কথা

সামগ্রিক ধারণা 

অ্যাপেন্ডিক্স হল বৃহদন্ত্রের শুরুর দিকে সংযুক্ত একটি আঙুল সদৃশ থলের মত অংশ এবং মানব শরীরে এর কোন উপযোগিতা সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। এপেন্ডিসাইটিস হল এপেনডিক্সের প্রদাহজনিত রোগ যেখানে অ্যাপেন্ডিক্স পুঁজে ভর্তি থাকে, যার কারণে অসম্ভব এবং অসহনীয় যন্ত্রণা হয়। এই যন্ত্রণাটি মূলত ডান দিকের তলপেটে বেশি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি নাভির আশে পাশেও হয়। প্রদাহ যত বাড়ে, এই যন্ত্রণা বাড়তে থাকে, আর যন্ত্রণা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছালে এপেন্ডিসাইটিস প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। যে সমস্ত মানুষ অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বয়স বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 10 থেকে 30 এর মধ্যে। তাই আসুন, আমরা আরো ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করি যে এপেন্ডিসাইটিস আসলে ঠিক কী জিনিস। 

এপেন্ডিসাইটিস কী? 

এপেন্ডিসাইটিস হল একটি চিকিৎসাগত আপৎকালীন অবস্থা যার জন্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন পেটের সার্জারি জন্য এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ এপেন্ডিসাইটিস যেকোনো বয়সেই হতে পারে এবং পুরুষ এবং মহিলা উভয়কে সমপরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যেসব পুরুষেরা 15 থেকে 25 বছরের মধ্যে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। বর্তমান সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ঘটনা বেশ কিছুটা কমেছে। এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে এর ঘটনাগুলি কিছুটা কমতে পারে কিন্তু এই দেশগুলির প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। যে সমস্ত জায়গায় নিয়মিত অত্যন্ত তন্তুসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চল রয়েছে, সেখানে অ্যাপেন্ডিসাইটিস কম দেখতে পাওয়া যায়। 

যদি অ্যাপেন্ডিক্সে কোনো ব্লকেজ থাকে, যার কারণে এটি সংক্রামিত হয়েছে বা এতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে, তখন অ্যাপেন্ডিসাইটিস দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে অ্যাপেন্ডিক্সটি ফুলে যায়, সংক্রমিত হয়ে যায় এবং অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক বোধ হয়। এই প্রদাহটি অ্যাপেন্ডিক্সের আশেপাশে শরীরের বাকি অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে। 

এর ফলে যে যন্ত্রণা এবং উপসর্গগুলি দেখা দেয়, সেগুলি অন্যান্য কিছু রোগকে ডেকে আনে, যেমন মূত্রনালীর সংক্রমণ অথবা পাকস্থলীর আলসার। অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো একটি আপৎকালীন রোগ যার জন্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগ নির্ণয় ডাক্তারের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। রোগীর শারীরিক চিহ্ন এবং নানা তদন্তের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করা হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ হলো, ডানদিকে তলপেট অঞ্চলে যন্ত্রণা। আরো বিস্তারিত বিশ্লেষণ করার জন্য এবং অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড এবং পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ওষুধ প্রয়োগ করে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা এবং সার্জারির মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা। সার্জারির মাধ্যমে অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করাকে বলা হয় অ্যাপেনডেক্টমি। যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসায় দেরি হয়ে যায়, তবে রোগীর শরীরে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন- পারফোরেশন, ফোঁড়া এবং পেরিটোনিটিস। সৌভাগ্যবশত যেকোনো মানুষ অ্যাপেন্ডিক্স ছাড়াই সুস্থভাবে বাঁচতে পারেন।

বাচ্চাদের অ্যাপেন্ডিসাইটিস 

যেহেতু যে কারোরই অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে, তাই বাচ্চারাও বড়দের তুলনায় এই ক্ষেত্রে কম আক্রমণযোগ্য, এমন নয়। 25 থেকে 30 বছর বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশি প্রচলিত। তবু যদি কোন বাচ্চা বা কিশোরের অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে, তবে এই ক্ষেত্রে তার যন্ত্রণাটি নাভির কাছাকাছি পাকস্থলীর এলাকায় সাধারণত হয়ে থাকে। এই যন্ত্রণা কখনো কখনো অতিরিক্ত বোধ হতে পারে এবং ধীরে ধীরে পাকস্থলীর নিচের দিকে ডান পাশে সরে যেতে থাকে এবং তার সঙ্গে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি প্রকাশ করতে থাকে: 

  • বমি করা 
  •  জ্বর হওয়া 
  • বমি বমি ভাব 
  •  খিদে হারিয়ে ফেলা 

যদি আপনার ডাক্তার মনে করেন যে আপনার সন্তানের অ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে, তবে এটির দ্রুত চিকিৎসা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। যদি 48 ঘণ্টার মধ্যে এই রোগ নির্ণয় না করা যায়, তবে আপনার সন্তানের অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়ার, ছড়িয়ে যাওয়ার এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপনার সন্তান যদি অ্যাপেন্ডিক্স এর মত কিছু উপসর্গের ব্যাপারে আপনার কাছে অভিযোগ করে, যেমন- জ্বর, বমি, খিদে কম পাওয়া, তবে আপনার অতি দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত, কারণ এর অনেক খারাপ দিক রয়েছে, যেগুলো আপনার সন্তানের জন্য ভালো হবে না। 

যত দ্রুত আপনি আপনার সন্তানকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন, ডাক্তার তত দ্রুত আপনার শিশুর উপসর্গগুলিকে বিশ্লেষণ করতে পারবেন এবং আপনার সন্তানের কিছু পরীক্ষা করাতে পারবেন যেমন: 

  • সিটি স্ক্যান
  • আল্ট্রাসাউন্ড
  • ইমেজিং টেস্ট
  • রক্ত পরীক্ষা 
  • মূত্র পরীক্ষা 

আপনার শিশুর উপসর্গগুলিকে একেবারেগোড়া থেকে বোঝার জন্য ডাক্তার আরও কিছু পরীক্ষা করতে বলতে পারেন। 

কারণ

কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্সে যদি কোন অবরুদ্ধ অংশের সৃষ্টি হয়, তবে অ্যাপেন্ডিসাইটিস দেখা যায়। অ্যাপেন্ডিক্স এর গাত্রে অবরুদ্ধ অংশ অথবা ব্লকেজ থাকলে, তা সংক্রমণে পরিণত হয়। এই সময় ব্যাকটেরিয়াগুলি দ্রুত পরিমাণে বাড়তে থাকে, যার ফলে অ্যাপেন্ডিক্স ফুলে যায়, প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং পুঁজে ভর্তি হয়ে যায়। যদি তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না করা হয়, তবে অ্যাপেন্ডিক্সটি ফেটে যেতে পারে। যে যে বিভিন্ন কারণগুলি সম্ভাব্য ভাবে আপনার অ্যাপেন্ডিক্সকে অবরুদ্ধ করতে পারে তা হল:

  •  সাধারণত মলের ভর, দৃঢ়তা (সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া), শরীরে কোনো বহিরাগত বস্তুর উপস্থিতি, পোকা, লসিকা কলার বৃদ্ধি, সংক্রমণ, আঘাত এবং টিউমারের কারণে  অ্যাপেনডিক্সের বাধা সৃষ্টি হলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে। 
  • মলের ভর, বহিরাগত বস্তু অথবা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অ্যাপেন্ডিক্স ফুলে যেতে পারে এবং এতে অস্বস্তি হতে পারে। অ্যাপেনডিক্স এর কারণে অতিরিক্ত মিউকাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা অ্যাপেনডিক্সের প্রাচীরে আরো বেশি করে চাপ দিতে থাকে। অ্যাপেনডিক্সের প্রাচীরে উচ্চ চাপ দেওয়াকে ছোট রক্তবাহ গুলির থ্রম্বোসিস বলা হয় (রক্ত তঞ্চন সৃষ্টি)। 
  • অ্যাপেন্ডিক্সের অন্তর্গাত্রে সাধারণত সাধারণত অসংখ্য লসিকা কলা থাকে। এইগুলি অসংখ্য অনাক্রম্য কোশের সমষ্টি যা লিম্ফোসাইট নামে পরিচিত। এই লসিকা কলাগুলি অন্ত্রের কিছু কিছু রোগের কারণে আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে, যেমন প্রদাহ মূলক মলত্যাগের রোগ, হাম, অ্যামিবিয়াসিস এবং ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অ্যাপেন্ডিক্সে অবরোধের সৃষ্টি হতে পারে। 
  • ফিতাকৃমি এবং চ্যাপ্টা কৃমির মতো পরজীবীরাও অ্যাপেন্ডিক্সের ব্লকেজ তৈরি করতে পারে। পেটে বন্দুকের গুলির মত আঘাত এবং কপারটির মত মহিলাদের গর্ভনিরোধক যন্ত্র ভুল জায়গায় স্থাপন করলে অ্যাপেনডিক্সের ব্লকেজ হতে পারে। টিউবারকিউলোসিস এর মত সংক্রমণ এবং ক্যান্সারের কারণেও অ্যাপেনডিসাইটিস হতে পারে। 
  • বর্ধিত চাপ বলয় রক্তপ্রবাহ কে কমিয়ে দেয় পোস্টগুলির সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত সরবরাহ হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কম পরিমাণে রক্ত সরবরাহ হলে কোষের মৃত্যু হতে পারে এবং অ্যাপেনডিক্সের নেক্রোসিস হতে পারে। 
  • যখন এটি ঘটে, তখন ব্যাকটেরিয়াগুলি অবরুদ্ধ অ্যাপেন্ডিক্স এর মধ্যে প্রজনন ঘটায়। ব্যাকটেরিয়াগুলি বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার পর অনাক্রম্যতা এবং প্রদাহ সৃষ্টি কোশ যেমন, শ্বেত রক্তকণিকা(ডাবুবিসি) সংক্রমণের স্থানে জমা হয় এবং সম্পূর্ণ পদ্ধতিটির ফলস্বরূপ প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
  • প্রদাহ সৃষ্টির ফলে অ্যাপেনডিক্স ফুলে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যায়। এটি কলার মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অ্যাপেনডিক্সের চারপাশে বেশ কিছু জিনিস তৈরি হতে থাকে এবং এর ফলে সংক্রমণ, থ্রম্বোসিস এবং নেক্রোসিস ঘটে।
  • যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে সংক্রামিত অথবা  প্রদাহ চলতে থাকা অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাবে এবং এর ফলে সংক্রামক পদার্থ গুলি পেটের প্রকোষ্ঠের মধ্যে ছড়িয়ে (পারফোরেট) যাবে এবং এর ফলে পেরিটোনাইটিস দেখা দেবে। কিছু কিছু সময় প্রদাহ সৃষ্টি হওয়া অ্যাপেন্ডিক্সের বাইরে পুঁজ ভর্তি ফোঁড়া (কলায় পুঁজ দ্বারা নির্মিত পকেট সদৃশ অংশ) তৈরি হয়। এই সমস্ত জটিলতার কারণে অ্যাপেন্ডিসাইটিস একটি আপৎকালীন রোগ যেখানে তৎক্ষণাৎ সার্জারির মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা উচিত। 

উপসর্গ

 অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গগুলি হল প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, বমি এবং জ্বর। কিন্তু এই আদর্শ উপস্থাপনাটি সমস্ত ক্ষেত্রে উপস্থিত নাও থাকতে পারে।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো পেটে ব্যথা। সাধারণত এই ব্যথা পেটের মাঝখানের অংশ থেকে শুরু হয় এবং তারপর ধীরে ধীরে নিচের দিকে ডান পাশে সরতে থাকে, ঠিক যেখানে অ্যাপেন্ডিক্স সাধারণত অবস্থিত থাকে। এই যন্ত্রণা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে, যদি অ্যাপেনডিক্স যেখানে অবস্থিত সেখানে চাপ দেওয়া হয় অথবা কাশি বা হাটার সময়ও এটি বৃদ্ধি পায়। ব্যাপক অ্যাপেন্ডিস এর ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির অসহনীয় যন্ত্রণা হতে পারে, এটি তাকে পা মুড়ে নিজের দেহটিকে বুকের কাছে নিয়ে আসতে বাধ্য করে। 

অ্যাপেনডিক্সের অঙ্গসংস্থানগত অবস্থান এক এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক হয়।  অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সঙ্গে যুক্ত যন্ত্রণা এবং এর উপসর্গ গুলিও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।  মূত্রথলির কাছে একটি প্রদাহযুক্ত অ্যাপেন্ডিক্স, থলিতে নানা অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে মূত্র ত্যাগের পদ্ধতি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। যদি অ্যাপেন্ডিক্স পিছনের দিকে বৃদ্ধি পায় তবে এই প্রদাহ পিছনের দিকে স্নায়ুর এবং পেশীগুলিকে উত্তেজিত করে তোলে এবং যার ফলে হাঁটার সময় কষ্ট হয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অন্যান্য উপসর্গগুলি হল 

  • জ্বর
  •  গা বমি বমি করা এবং বমি করা
  •  খিদে না থাকা
  •  নাভির আশে পাশে যন্ত্রণা
  •  পেট ফুলে থাকা
  •  ঘন ঘন এবং যন্ত্রণাদায়ক মূত্রত্যাগ

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গগুলি বিভিন্ন লোকদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে এবং এই প্রদাহর  সময়কালের জন্য উপসর্গগুলি ভিন্ন ভিন্ন হয়। উপসর্গগুলির সময়ের উপর নির্ভর করে এবং এতে জটিলতার উপস্থিতির কথা চিন্তা করে অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে তীব্র, দীর্ঘস্থায়ী, পুনরাবৃত্তি করা অথবা জটিল- এই তিন ভাগে শ্রেণীবিভক্ত করা যায়।

তীব্র অ্যাপেন্ডিসাইটিস

যখন উপসর্গগুলি হঠাৎ করে এবং তীব্র আকারে দেখা দেয়, তখন তীব্র অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়। এটি 24 থেকে 48 ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে পেটের সার্জারির জন্য এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ।

দীর্ঘস্থায়ী অ্যাপেনডিসাইটিস

যদি অ্যাপেনডিক্সের প্রদাহের রোগ নির্ণয় না করা হয় এবং এর উপসর্গগুলি তিন সপ্তাহ পর্যন্ত থেকে যায়, তবে এই রোগ হয়। এর উপসর্গগুলি হঠাৎ হঠাৎ আসতে পারে এবং প্রায়ই উধাও হয়ে যেতে পারে। সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী অ্যাপেন্ডিসাইটিস তখন নির্ণীত হয়, যখন যন্ত্রণার তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং তিনি দীর্ঘস্থায়ী অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগ হবার মতো আচরণ করেন। 

পুনরাবৃত্তিমূলক অ্যাপেন্ডিসাইটিস

যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য রোগীর তলপেটে অনেকবার ব্যথা হতে থাকে, তবে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। 

জটিল অ্যাপেন্ডিসাইটিস

যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে সংক্রামিত বা প্রদাহ সৃষ্টি হওয়া অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাবে নয়তো পারফোরেট করবে। এর ফলে বিষাক্ত পদার্থগুলি পেটের প্রকোষ্ঠে ছড়িয়ে যেতে পারে। যখন অ্যাপেন্ডিক্স এর ভেতরের বর্ধিত চাপের কারণে ফেটে যায় অথবা অ্যাপেনডিক্সে রক্ত সরবরাহ থেমে যায় এবং পচন ধরে যায়, তখন জটিল অ্যাপেন্ডিসাইটিস দেখা যায়। যখন অ্যাপেন্ডিক্স এর কাছাকাছি অঞ্চলে একটি থলের মতো অংশে পুঁজ সংগৃহীত হয়, তখন অ্যাপেনডিক্সে ফোঁড়া তৈরি হয়। 

একটি  ফোঁড়াযুক্ত অ্যাপেন্ডিক্স ফেঁটে যেতে পারে এবং এর ভিতরের সংক্রামক পদার্থগুলি পেটের প্রকোষ্ঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং পেরিটোনাইটিস সৃষ্টি করতে পারে (পেটের ভিতরের গাত্রের প্রদাহ)। 

আরো কিছু কিছু রোগে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মত একই উপসর্গ দেখা যায়। এগুল হল 

  • জরায়ু এবং আশেপাশের অংশে সংক্রমণ 
  • মূত্রনালীতে পাথর 
  • মূত্রনালীতে সংক্রমণ
  • এন্ডোমেট্রোসিস
  • অন্ত্রের সংক্রমণ
  • গলব্লাডার স্টোন এবং তার সংক্রমণ

ঝুঁকির কারণ

  • বয়স: বয়ঃসন্ধিকালে উপস্থিত কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে (15 থেকে 25 বছর ) অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ঝুঁকি বেশি থাকে। 
  • লিঙ্গ: মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি ঝুঁকি থাকে।
  • সংক্রমণ: গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।
  •  ট্রমা: অ্যাপেন্ডিক্স এর অভ্যন্তরীণ আঘাত অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।
  • কম তন্তুযুক্ত খাদ্যাভ্যাস: কম তন্তু যুক্ত খাদ্য খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং কিছু পরিমাণে মল অ্যাপেনডিক্সে জমা হয়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে। 

রোগ নির্ণয়

একজন রোগীর ইতিহাস, একটি শারীরিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা তদন্ত করে ডাক্তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগ নির্ণয় করেন। 

  • শারীরিক পরীক্ষা

শারীরিক পরীক্ষা চলাকালীন ডাক্তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন লক্ষ্য করেন, যেমন রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং হৃদস্পন্দন। ডাক্তার পেটের একটি পরীক্ষা করবেন এবং ব্যথার নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করবেন। অ্যাপেন্ডিসাইটিসে ভোগা রোগীদের জ্বর, বর্ধিত হৃদস্পন্দনের হার, ডান দিকে তলপেটে যন্ত্রণা এবং অন্ত্রের হ্রাসপ্রাপ্ত চলন লক্ষ্য করা যেতে পারে। যদি আপনার ডাক্তার সন্দেহ করেন যে আপনার অ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে, তবে তিনি আপনার পেটের ডান পাশে নিচের দিকে অংশ কতটা নরম তা পরীক্ষা করে দেখবেন এবং একইসঙ্গে এটির ফুলে থাকা এবং দৃঢ়তা পরীক্ষা করবেন। ডাক্তারের একবার আপনাকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করা হয়ে গেলে তিনি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কিছু দৃশ্যমান চিহ্নের উপর নির্ভর করে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আরো বেশি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা করতে বলবেন। এটি ডাক্তারকে আরো বুঝতে সাহায্য করবে যে আপনি বর্তমানে যে চিহ্ন এবং উপসর্গগুলি অনুভব করছেন, তার পিছনে আরো অন্য কোনো কারণ আছে কিনা। 

অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে শনাক্ত করার জন্য কোন নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই। যদি ডাক্তার আপনার চিহ্ন এবং উপসর্গগুলির জন্য অন্য কোনো কারণ খুঁজে না পান, তবে হয়তো তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন যে আপনার অ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে। 

  • রক্তপরীক্ষা 

শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা (ডব্লিউবিসি) গণনা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ডব্লিউবিসি এর সংখ্যা বেড়ে গেলে তা সংক্রমণের একটি সাধারণ চিহ্ন হিসেবে পরিগণিত হয়। ডব্লিউবিসি-এর পাশাপাশি ডাক্তার সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষার সুপারিশ করতে পারেন। এই পরীক্ষাটি করার জন্য আপনাকে একজন পরীক্ষাগারের প্রকৌশলীর কাছে যেতে হবে। তারা আপনার রক্তের একটি নমুনা সংগ্রহ করবেন এবং এটিকে বিশ্লেষণ করে রোগের কারণ শনাক্ত করবেন। 

  • গর্ভধারণের পরীক্ষা

এরকম বহু ঘটনা দেখা গেছে, যখন একটি এক্টোপিক গর্ভাবস্থাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলে ভুল করা হয়েছে। একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু যখন নিজেকে জরায়ুর পরিবর্তে একটি ফ্যালোপিয়ান নলে স্থাপিত করে ফেলে, তখন এটি দেখা যায়। এটি একটি গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা। যদি ডাক্তার এটি সন্দেহ করেন, তবে আপনাকে হয়তো গর্ভধারণের পরীক্ষা করতে হবে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বোঝার জন্য ডাক্তাররা একটি ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করতে পারেন।

  • পেল্ভিকের পরীক্ষা

এই উপসর্গগুলি অনুভব করার আরেকটি কারণ হতে পারে পেলভিকের প্রদাহ। এটি সাধারণত কেবলমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাই এটিকে জরায়ুর সিস্ট হিসাবে উল্লেখ করা হয়। যা আপনার প্রজননতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই পরীক্ষার সময় পরীক্ষাগারের প্রকৌশলী আপনার যোনি, সার্ভিক্স এবং যোনিদ্বারকে পরীক্ষা করবেন এবং এছাড়াও জরায়ু এবং ডিম্বাশয়কে আলাদা করে পরীক্ষা করবেন। তারা এই পরীক্ষার জন্য কলার নমুনা সংগ্রহ করবেন। 

অন্যান্য পরীক্ষাগারের পরীক্ষাগুলিও পেট সংক্রান্ত অঙ্গ যেমন যকৃৎ এবং বৃক্কের রোগগুলিকে দূর করার জন্য অথবা জটিলতা দূরীকরণে ব্যবহৃত হয়। এই পরীক্ষাগুলি হল: 

  • সিআরপি অথবা সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন জটিল অ্যাপেন্ডিসাইটিসে দেখা যায়। 
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং বৃক্কে পাথর আছে কিনা শনাক্ত করার জন্য মূত্র পরীক্ষা করা হয়। এর উপসর্গগুলি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মত হতে পারে।  অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূত্রে পুঁজ যুক্ত কোশ দেখা যেতে পারে। এই পরীক্ষাটী করা হয় কারণ, অনেক সময় অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সময় আপনার মূত্রনালীতে বা অন্য কোনো উদরস্থ অঙ্গের ভিতরে ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণ ঘটে, এর কারণে আপনার দেহে কিছু চিহ্ন এবং উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এটা বোঝার জন্য আপনার ডাক্তার একটি মূত্রপরীক্ষার নির্দেশ দেবেন এবং ল্যাব কর্তৃক এটি সংগৃহীত হবে। 
  • যকৃতের কার্যাকারিতার পরীক্ষা
  • অগ্ন্যাশয়ের রোগ নির্ণয় করার জন্য অ্যামাইলেজ পরীক্ষা, এর উপসর্গগুলিও অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মত। 
  • ইমেজিং টেস্ট
  • পেটের আল্ট্রাসাউন্ড: যেসব রোগীদের অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ড হল একটি প্রাথমিক তদন্তের অংশবিশেষ। একজন সমাজবিদ অ্যাপেন্ডিক্সকে দেখতে এবং এতে উপস্থিত নানা জটিলতাকে বোঝার জন্য একটি আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন ব্যবহার করেন। 
  • সিটি স্ক্যান: একটি সিটি স্ক্যান আলট্রাসাউন্ডের থেকে অনেক বেশী সংবেদনশীল। যে সমস্ত রোগীদের অস্বাভাবিক উপসর্গসহ অ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে এবং যেসব ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্সটি বৃহদন্ত্রের পেছনে অবস্থিত, সেগুলি সিটি স্ক্যান শনাক্ত করতে পারে। 
  • এক্স-রে (বেরিয়াম এনিমা): এটি ডাক্তারকে রোগীর মলদ্বার, বৃহদন্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের নিচের অংশকে পরীক্ষা করতে সাহায্য করে। রেক্টাল এনিমা নামে একটি তরল পদার্থ রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয় তারপর পেট, অ্যাপেনডিক্সের ব্লকেজ এবং নন ফিলিং অ্যাপেন্ডিক্স পরীক্ষা করার জন্য পেটের এক্স-রে করানো হয়। এই পরীক্ষাটি এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় না।

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা

কিছু কিছু বিরল ক্ষেত্রে, সার্জারি ছাড়াই অ্যাপেন্ডিসাইটিস ঠিক হয়ে যেতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণের জন্য সার্জারি করাতে হয় এবং এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হয়। এই সার্জারি অ্যাপেন্ডক্টমি নামে পরিচিত। আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য আপনাকে একটি চিকিৎসার পরিকল্পনা বাতলে দেবেন। এটি নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে যেকোনো একটি বা একাধিক হতে পারে:

  • সার্জারি
    অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা করার জন্য অ্যাপেন্ডক্টমি নামে একটি সার্জিকাল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এই পদ্ধতিতে অ্যাপেন্ডিক্সটিকে সার্জিক্যাল ভাবে অপসারণ করা হয়। যদি অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যায়, তবে পেটের প্রকোষ্ঠটিকে পরিষ্কার করা হয়। এই সার্জারির কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকি থাকলেও এই ঝুঁকিগুলি অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে চিকিৎসা না করে ফেলে রাখার থেকে অনেক কম। এই সার্জারিটি ল্যাপারোস্কপির মত ন্যূনতম ইনভেসিভ পদ্ধতিতে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওপেন সার্জারির প্রয়োজন পড়ে, যদি পেটের প্রকোষ্ঠকে পরিষ্কার করতে হয়। এটি কেবল তখনই হয় যদি রোগীর পরিপাকতন্ত্রের কোনো টিউমার থেকে থাকে।
  • a) ওপেন অ্যাপেন্ডেক্টমি

একটি ওপেন অ্যাপেন্ডক্টমির সময়, অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণের জন্য ডানদিকেত তলপেটে একটা মাত্র ছেদ করা হয়। এই পদ্ধতিটি বর্তমানে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। 

b) ল্যাপারোস্কোপিক অ্যাপেন্ডক্টমি

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিতে খুব ছোট ছোট ছেদ করতে হয় এবং এটি কম ইনভেসিভ হয়। সার্জেন তিনটি ছোট ছোট ছেদ(প্রতিটি 1/4 – 1/2 ইঞ্চি) করেন এবং এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটিতে একটি ক্যানুলার মাধ্যমে একটি ল্যাপারোস্কোপ যন্ত্র (একটি ভিডিও ক্যামেরা যুক্ত ছোট টেলিস্কোপ) ঢুকিয়ে দেন। এর ফলে সার্জেন্ট অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলিকে একটি টেলিভিশন মনিটরে বড় করে দেখতে পান। অন্যান্য ক্যানুলাগুলি ছেদ্গুলির মধ্য দিয়ে ঢুকানো হয় এবং এরপর অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা হয়। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিতে ছোট ছোট ছেদ করতে হয় এবং এর ফলে রোগী খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। 

সার্জারির পরে ব্যথা কমানোর ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হতে পারে। 

একটি অ্যাপেন্ডেক্টমির আগে রোগীর কী কী করা উচিৎ?

যদি কোন রোগীর অ্যাপেন্ডক্টমি হবে বলে স্থির করা থাকে, তবে তাকে যে কোনো জটিলতা এড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি মেনে চলতে হবে:

  • সার্জারির 8 ঘণ্টা আগে যে কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না।
  • আপনার পূর্বের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সমস্ত তথ্য আপনার সার্জেন্টকে দিন।
  •  যদি আপনার কোন ওষুধে বা ল্যাটেক্স এর প্রতি কোন সংবেদনশীলতা থাকে, তবে তাও আপনার সার্জেনকে জানান। 
  • আপনি যে ওষুধগুলি এবং খাদ্যের বিকল্পগুলি খান, তার সবকিছু আপনার সার্জেন্টকে জানান। 
  • আপনি যদি অ্যাসপিরিন বা অন্য কোন তঞ্চন বিরোধী ওষুধ খেয়ে থাকেন, তবে তা আপনার সার্জেন্টকে জানান, কারণ এগুলি রক্ত তঞ্চনে বাধা দেয়। ডাক্তার সার্জারির আগে এই ওষুধ আপনাকে খেতে বারণ করতে পারেন। 

ছুটি হওয়ার পর রোগীর কী করা উচিত? 

  • হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবার পর রোগীর নিজের যথাযথা যত্ন নেওয়া উচিৎ। এটি সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
  • ক্লান্তিকর কার্যকলাপ এড়িয়ে চলুন। 
  • ছেদের জায়গাটিকে পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখুন। 
  • যতদিন না ডাক্তার রোগীকে কাজ করতে এবং স্বাভাবিক কাজকর্মগুলি করার অনুমতি দিচ্ছেন, ততদিন যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিন। 
  • যদি রোগীর জ্বর, বমি, ব্যথা এবং ছেদের কাছে লালচে ভাব এবং অন্য কোনো উপসর্গ দেখা যায়, তবে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
  • নিষ্কাশন
    যদি কোন অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে থাকে এবং এর ফলে এর চারিদিকে ফোঁড়া তৈরি হয়ে থাকে, তবে এই ফোঁড়াকে নিষ্কাশিত করা প্রয়োজন। ত্বকের মাধ্যমে ফোঁড়ায় একটি নল স্থাপন করে এই কাজ করা হয়। নিষ্কাশনের কিছু সপ্তাহ পরে অ্যাপেন্ডক্টমি করা হয়।
  • জীবনশৈলীর প্রতিকার
    অ্যাপেন্ডক্টমির পরে আপনার দেহটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য এবং পুনরায় এই অবস্থা যাতে ফিরে না আসে, তার জন্য আপনাকে কিছু কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। প্রাথমিক সুস্থ হয়ে ওঠার পর্যায়ে আপনাকে যেকোনো প্রকার ক্লান্তিকর কার্যকলাপ এড়িয়ে চলতে হবে। যখন আপনি হাসবেন, কাশবেন অথবা যখন আপনি কিছু নির্দিষ্ট অঙ্গ নাড়াচাড়া করবেন, তখন আপনার পেটকে ঠেস দেওয়ার জন্য একটি বালিশ রাখতে হবে। যদি ব্যথা উপশমকারী ওষুধগুলি কাজ না করে, তবে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। যখন আপনার মনে হবে যে আপনার শরীরের বিশ্রাম প্রয়োজন, তখন আপনাকে বিশ্রাম করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনার ডাক্তার আপনাকে তন্তুসমৃদ্ধ খাদ্যের বিকল্প খেতে বলতে পারেন। এছাড়াও ধীরে ধীরে আপনার কাজকর্ম করা শুরু করুন, যেমন অল্প দূরত্ব হাঁটাচলা করা। যখন আপনি সম্পূর্ণ তৈরি থাকবেন, কেবলমাত্র তখনই উঠে পড়ুন এবং চলাফেরা করুন। 

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা থেকে সেরে ওঠা 

আপনার সেরে ওঠার ক্ষেত্রে অনেকগুলি বিষয় কাজ করে, যেমন আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য, যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিস অথবা সার্জারির সময় আপনার কোনো জটিলতা হয়ে থাকে অথবা যে কোন একটি নির্দিষ্ট প্রকারের চিকিৎসা যা আপনি পেয়েছেন।  যদি অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণের জন্য আপনার  ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি হয়ে থাকে, তবে সার্জারির কিছু ঘণ্টা পরেই আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। 

But if you had open surgery, the chances are that you will have to spend a few more days in the hospital, receiving proper recovery. Open surgery is highly invasive compared to laparoscopic surgery, and it requires more aftercare.

প্রতিরোধ

অ্যাপেন্ডিসাইটিসকে প্রতিরোধ করার জন্য কোন নির্দিষ্ট উপায় নেই। কিন্তু এই রোগটি গড়ে ওঠার ঝুঁকিকে আপনি কম করতে পারবেন। দেখা গেছে যে যে সমস্ত দেশগুলিতে মানুষ অত্যন্ত তন্তুসমৃদ্ধ খাদ্য খান, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিস কম দেখা যায়। তন্তুযুক্ত খাদ্য খেলে দেহ অপেক্ষাকৃত নরম মল তৈরি করে। এইগুলি অ্যাপেন্ডিক্সের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং তাই অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়। যে সমস্ত খাবার তথ্যসমৃদ্ধ, তা হল:

  • উচ্চ তন্তু সমৃদ্ধ খাদ্য: উচ্চতম যুক্ত খাদ্য যেমন মিষ্টি আলু, ফ্ল্যাক্স সিড, কাঁচা আমন্ড, মাশরুম ইত্যাদি খেলে তা অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। উচ্চ তন্তু সমৃদ্ধ খাবার মলের ভারের দ্বারা অ্যাপেন্ডিক্স হওয়াকে বাধা দেয়। 
  • তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা:যে যে উপসর্গগুলি দেখে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে বলে মনে হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং তাঁর পরামর্শ নিলে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জটিলতা এড়ানো যেতে পারে। 
  • খাদ্যে তন্তু মলের ভার দ্বারা অ্যাপেন্ডিক্সের ব্লকেজ কমাতে সাহায্য করে। এই ধরণের খাদ্য হল ফল, সবজি, ওটমিল, গোটা গম, গোটা শস্য এবং ব্রাউন রাইস, ডাল, বিন্স, মটরশুঁটি এবং অন্যান্য শিম।  

উপসংহার

যদি আপনি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সামান্যতম উপসর্গও অনুভব করেন, তবে তবে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগটি অতি দ্রুত চিকিৎসার ক্ষেত্রে আপৎকালীন অবস্থায় পরিণত হয়। তাই গুরুতর অবস্থাকে দ্রুত শনাক্ত করা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা খুবই গুরত্বপূর্ণ। 

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

অ্যাপেন্ডক্টমির দীর্ঘকালীন ফলাফল কী কী? 

অ্যাপেন্ডক্টমির ফলে কোনো দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা তৈরি হয় না। সার্জারির 2 থেকে 6 সপ্তাহ পরে আপনি আপনার কাজ শুরু করতে পারেন। তবুও, সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। 

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা করার একমাত্র উপায় কি সার্জারি?

না। অল্প পরিমাণে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে তা অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথার উপশমকারী ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। যদিও, গুরুতর অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে সার্জারির মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্সটি অপসারণ করা উচিৎ যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো জটিলতা বা সংক্রমণ না হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য আমার কোন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ? 

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য আপনার একজন ফিজিশিয়ান, জেনারেল সার্জেন অথবা গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ। 

গর্ভাবস্থায় কি অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে? যদি হতে পারে, তবে এর চিকিৎসা কী?

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ট্রাইমিস্টারে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সংক্রামক তরলের সংস্পর্শে আসার কারণে ভ্রুণের মৃত্যু ঘটতে পারে। গর্ভবতী রোগ হন বা অন্য কোনো রোগী, প্রত্যেকেরই রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা একই রকম হয়। যদিও, অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন আছে। সার্জেন, জেনারেল ফিজিশিয়ান এবং স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ রোগীকে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করবেন। 

কোন কোন রোগের উপসর্গগুলি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?

মেকেলের ডাইভার্টিকুলিটিস, পেলভিকে প্রদাহ রোগ (পিআইডি), ডান দিকের উপরের দিকের পেটের প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ, ডান দিকের ডাইভার্টিকুলিটিস, বৃক্কের রোগ এবং এক্টোপিক গর্ভাবস্থার মত কিছু রোগে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মত উপসর্গ দেখা যায়। 

অ্যাপোলো হাসপাতালে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসার জন্য ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসকেরা আছেন। আপনার শহরের কাছাকাছি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের শ্রেষ্ঠ ডাক্তার খুঁজে পাওয়ার জন্য নিচের লিঙ্কগুলি দেখুন:

Avatar
Verified By Apollo Gastroenterologist
The content is reviewed by our experienced and skilled Gastroenterologist who take their time out to clinically verify the accuracy of the information.
Quick Appointment
Most Popular

কলপোস্কোপির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী?

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন রিং কি পৌরুষত্বহীনতার চিকিৎসা করতে পারে?

হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটার জুতো বাছাই করার সময় চারটি দিক মনে রাখা উচিত

ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার লক্ষণসমূহ যেগুলি আপনার বিবেচনা করা উচিত

Quick Book

Request A Call Back

X