অন্ত্র প্রতিস্থাপন কী?
অন্ত্র বা আভ্যন্তরীণ প্রতিস্থাপনকে ক্ষুদ্রান্ত্র প্রতিস্থাপন হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রতিস্থাপন করার এই অস্ত্রোপচার পদ্ধতি সাধারণত অন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী বা গুরুতর ব্যর্থতার ক্ষেত্রে করা হয়। যদিও অন্ত্র বিকল হওয়াকে প্রায়শই অনান্ত্রিক পুষ্টির মতো বিকল্প থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে; তবে শর্ট বাওয়েল সিনড্রোম এবং যকৃতের রোগের সাথে যুক্ত জটিলতার জন্য প্রতিস্থাপনই একমাত্র কার্যকর বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। আজকাল বিরল ধরণের অঙ্গ প্রতিস্থাপনও করা হচ্ছে, আর ইমিউনোসপ্রেসিভ পদ্ধতি, অস্ত্রোপচারের কৌশল, অনান্ত্রিক পুষ্টি এবং প্রতিস্থাপনের আগে এবং পরে রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নতির কারণে অন্ত্র প্রতিস্থাপনও একটি থেরাপিউটিক বিকল্প হিসাবে ক্রমশ প্রচলিত হয়ে উঠছে।
ক্ষুদ্রান্ত্র কী?
নবজাতক শিশুদের ক্ষুদ্রান্ত্রটি প্রায় সাত থেকে আট ফুট লম্বা হয় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি 20 ফুটের কাছাকাছি বৃদ্ধি পেতে পারে। ক্ষুদ্রান্ত্র তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত:
- ডিওডেনাম: এটি ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় 12 ইঞ্চি লম্বা হয় এবং পাকস্থলীর সাথে সংযুক্ত থাকে। যকৃত (পিত্ত) এবং অগ্ন্যাশয় থেকে তরল ডিওডেনামে নিঃসৃত হয় এবং খাদ্য থেকে শ্বেতসার, প্রোটিন এবং চর্বি হজম করতে সাহায্য করে।
- জেজুনাম: এটি ক্ষুদ্রান্ত্রের মাঝের অংশ যা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রায় অর্ধেক অংশ নিয়ে গঠিত হয়। এটি খাবার থেকে জল এবং পুষ্টি শোষণ করে।
- ইলিয়াম: এটি দূরবর্তী ক্ষুদ্রান্ত্র এবং এটির বিশেষ কিছু কাজ রয়েছে যেমন নির্দিষ্ট হরমোন এবং প্রোটিন তৈরি করা।
অন্ত্র প্রতিস্থাপন কার জন্য প্রযোজ্য হবে?
ক্ষুদ্রান্ত্রের অকেজো হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা অন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য যোগ্য। খাদ্য থেকে পুষ্টি, তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট শোষণ করতে অক্ষমতার কারণে ক্ষুদ্রান্ত্র অকেজো হওয়া জীবন-নাশের কারণ হতে পারে। বিশেষ কিছু অবস্থা, যেমন গুরুতর প্রদাহ, আলসারেশন, অন্ত্রে বাধা, ফিস্টুলেশন, ছিদ্র, ক্রোনস ডিজিজ অন্ত্রের কার্যকারিতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অন্ত্রের অকেজো হওয়া কাকে বলে?
শোষণের জন্য পাচনতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ক্ষুদ্রান্ত্র। বেশিরভাগ মানুষ পাকস্থলী বা বৃহদান্ত্র ছাড়া বাঁচতে পারে, কিন্তু আপনার খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণ করতে না পারার কারণে ক্ষুদ্রান্ত্র ছাড়া বাঁচা কঠিন। যখন ক্ষুদ্রান্ত্র এর পুরো বা বেশিরভাগই কার্যকরীভাবে অকেজো হয় বা যদি এটি অপসারণের প্রয়োজন হয়, তখন তরল আকারে পুষ্টি শিরায় (শিরার মাধ্যমে সরাসরি রক্ত প্রবাহে) সরবরাহ করে জীবনকাল বাড়ানো যেতে পারে। এই পুষ্টিকে বলা হয় ‘টোটাল অনান্ত্রিক নিউট্রিশন’ (টিপিএন)। যখন একজন ব্যক্তির অপরিবর্তনীয় অন্ত্রের ব্যর্থতা থাকে, তখন তার বেঁচে থাকার জন্য টিপিএন এর প্রয়োজন হতে পারে।
অন্ত্রের অকেজো হওয়ার কারণ কী?
অন্ত্রের অকেজো হওয়া দুটি ধরনের হতে পারে:
1. ক্ষুদ্রান্ত্রের দৈর্ঘ্য খাদ্য ও জল পর্যাপ্ত পরিমাণে শোষণ করার জন্য অপর্যাপ্ত হতে পারে। একে ‘শর্ট বাওয়েল সিনড্রোম’ বলা হয়।
2. ক্ষুদ্রান্ত্র বা পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশ সঠিকভাবে কাজ করছে না। এটি অন্ত্রের গতিশীলতার ব্যর্থতার কারণে হতে পারে, অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাদ্যকে চালিত করে এমন নড়াচড়া, অথবা শোষণের অপর্যাপ্ততা (গুপ্ত ডায়রিয়া), বা কোশের (অন্ত্রের আস্তরণ) সঠিকভাবে শোষণের অক্ষমতার কারণে হতে পারে।
যখন অন্ত্র খুব ছোট হয়, একজন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে মলত্যাগ করতে পারে, কারণ সে যথেষ্ট হারে পুষ্টি শোষণ করতে পারছে না এবং খুব বেশি পরিমাণে তরল বেরিয়ে যেতে পারে, যার ফলে জলশূন্যতার কারণ হতে পারে। টিপিএন শরীরের ক্যালোরি চাহিদা পূরণ সহ তরলের মাত্রা উভয়ই প্রদান করতে পারে। সাধারণত বড় বয়সের শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্করা কিছু কারণে অন্ত্রের ব্যর্থতায় ভোগে, তবে শিশুদেরও বিভিন্ন কারণে অন্ত্রের ব্যর্থতা ঘটতে পারে।
অন্ত্র প্রতিস্থাপনের প্রকারগুলি কী কী?
প্রধান তিন ধরনের অন্ত্র প্রতিস্থাপন হয়:
1. একটি বিচ্ছিন্ন অন্ত্র প্রতিস্থাপন (অন্ত্রের অংশ প্রতিস্থাপন করা হয় যেমন – জেজুনাম, ইলিয়াম ইত্যাদি)
2. একটি সম্মিলিত অন্ত্র-লিভার গ্রাফ্ট (লিভার এবং অন্ত্রের প্রতিস্থাপন একসাথে করা হয় গুরুতর লিভারের কর্মহীনতার কারণে, যা সাধারণত টোটাল অনান্ত্রিক পুষ্টির কারণে হয়)
3 . একটি মাল্টিভিসারাল গ্রাফ্ট (যকৃত, ডিওডেনাম, অগ্ন্যাশয়, কোলন, ইত্যাদি একসাথে প্রতিস্থাপন করা হয়)
অন্ত্রের প্রতিস্থাপন করতে কতক্ষণ সময় সার্জারি লাগে?
গড়ে, অন্ত্রের প্রতিস্থাপনকারী অস্ত্রোপচারে আট থেকে দশ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগে। তবে, অস্ত্রোপচারের সময়কাল রোগীর অন্ত্রের প্রতিস্থাপন কোন ধরণের হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। প্রতিটি ধরনের অন্যটির থেকে আলাদা হয়।
যদিও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রতিস্থাপনকারী অস্ত্রোপচারে সাধারণত 8 ঘন্টা সময় লাগে, মাল্টি-ভিসারাল ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারিতে 12 ঘন্টা বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
অন্ত্রের প্রতিস্থাপনের পরে রোগীকে কতক্ষণ হাসপাতালে থাকতে হবে?
অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে ট্রান্সপ্লান্ট ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বেশিরভাগ রোগীই প্রায় এক থেকে চার দিন আইসিইউতে কাটান। রোগী সেইসময়
প্রত্যাখ্যানবিরোধী ওষুধের অধীনে থাকবে। এর কারণ হল মানবদেহের অনাক্রম্যতা শরীরে প্রতিস্থাপন হওয়া নতুন অঙ্গের সাথে লড়াই করার জন্য কাজ শুরু করে, এটাকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে। প্রত্যাখ্যানবিরোধী ওষুধগুলি অনাক্রম্যতার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে দমন করে দেয়, যাতে শরীর এই নতুন অন্ত্র গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
নিয়মিত খাদ্যতালিকার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসরের জন্য রোগীর দেহে একটা খাদ্যবাহী নল যুক্ত থাকে এইসময়। আইসিইউতে থাকাকালীন, অন্ত্রের প্রতিস্থাপনকারী দল দ্বারা রোগীকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তারা রোগীর অবস্থার উপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখবেন যে:
• রোগীকে ভেন্টিলেটর থেকে বের করে আনা
• অঙ্গটিকে প্রত্যাখ্যান করছেন বা সংক্রমণ ঘটছে কিনা তার প্রতি লক্ষ্য রাখা
•রোগীর প্রত্যাখ্যানবিরোধী ওষুধগুলিকে সামলানো
অবস্থা স্থিতিশীল হয়ে গেলে, রোগীকে সাধারণ রোগীর ঘরে স্থানান্তরিত করা হবে। প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার পরবর্তীকালে রোগীর হাসপাতালে তিন থেকে চার সপ্তাহের মতো থাকতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অপেক্ষার তালিকা বলতে কী বোঝায়?
সম্ভাব্য প্রাপকদের, অঙ্গের অপেক্ষার তালিকায় রাখা হয়। প্রতিস্থাপনকারী অস্ত্রোপচারের আগে প্রথমেই একটি অঙ্গ খুঁজে বের করতে হবে। অন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল প্রতিস্থাপনযোগ্য অন্ত্রের উপলবদ্ধতা।
সার্জন, অ্যানেস্থেটিস্ট, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টদের একটি দল অন্ত্র প্রতিস্থাপনকারী দলে থাকে। একবার প্রাপকের মূল্যায়ন সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এবং একটি উপযুক্ত অঙ্গের জন্য একটি অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়ে গেলে, দলটি দাতার অন্ত্রের সাথে মিল খুঁজে পেলেই প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
উপসংহার
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অন্ত্রের প্রতিস্থাপনের ফলাফল উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। অন্ত্র প্রতিস্থাপনে সাফল্যের হার 90 শতাংশের বেশি, যেখানে সবচেয়ে জটিল ক্ষেত্রে সাফল্যের হার 70-80 শতাংশের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে।