ক্যান্সার হল এমন একটি রোগ যা শুধু শরীর নয় রোগীর মনকে এবং মানসিক অবস্থাকে প্রচন্ড ভাবে প্রভাবিত করে। ক্যান্সারের চিকিৎসাসমূহ যথা রেডিওলজি, কেমোথেরাপি ও সার্জারি দ্বারা ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলিকে বিনষ্ট করা হয় এতে শারীরিকভাবে রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেও তাঁর মানসিক অবস্থা ঠিক হতে লেগে যায় বছরের পর বছর। ডিপ্রেশন, একাকীত্ব এবং নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করা এবং সমাজ থেকে নিজেকে বহিঃষ্কৃত ভাবা হল এর কতগুলি লক্ষণ ক্যান্সারজয়ী বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই এগুলি দেখা যায়। এমনকি ক্যানসারমুক্ত হওয়ার বহুবছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও।
সতর্কতার এই দিকটি পূর্বে সামান্যই আলোচিত হয়েছে। অংকোলজিস্টরা এই দিকটি সম্পর্কে রোগীকে সাহায্য করার সর্বোত্তম চেষ্টার পরেও তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে হয়। রোগীদের এক্ষেত্রে সাইকোলজিস্টরা ঘুমের ওষুধ বা বিষাদের ওষুধের নিদান দেন যেটা তাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনুপযুক্ত। সাম্প্রতিককালে সাইকো-অংকলজি একটি বিশেষ শাখা হিসাবে এই বিষয়টি নিয়ে পরিবর্তনের সূচনা করেছে। কিন্তু এই দেশের হাতে গোনা কিছু অভিজ্ঞ চিকিৎসক বাদ দিয়ে প্রায়শই পরিবারের সদস্য এবং সেবিকাদের কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয় যাতে তাঁরা এই বিষয়ে তাঁদের নিজেদের মতো করে রোগীর দেখাশোনা করে থাকেন।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সহায়তা প্রদানকারী দল যাদের এই ধরনের রোগীদের নিয়ে আগে থেকে অভিজ্ঞতা আছে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের সামাজিক ও মানসিক অবস্থা পুনরায় স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারেন।
স্তন ক্যানসারে সহায়তাকারী দল, অস্টমি গ্রুপ এবং ল্যারিনজেক্টমি ক্লাব হল এমন কতগুলি উদাহরণ যারা রোগীদের উদ্বেগ, প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যাগুলি সমাধানে এবং একই সমস্যা অনুভবকারী অন্য রোগীদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম করতে সহায়তা প্রদানে সাফল্যলাভ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এইসব গ্রুপগুলি অধিক জনপ্রিয়। যদিও এই গ্রুপগুলি দ্বারা নিয়মিত শারীরিক ভাবে একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং মেলামেশার মাধ্যমে আলাপ-আলোচনাই এই রোগের সমাধান হিসেবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
গলার ক্যানসারের শেষ পর্যায়ে যারা আক্রান্ত তাদের একটি অপারেশনের মাধ্যমে যেতে হয় যার নাম টোটাল ল্যারিংটমি, এতে স্বরযন্ত্র বাদ দিয়ে দেওয়া হয় একদম শেষ পর্যায়ে। এই সার্জারির ফলে রোগী নাক অথবা মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করতে সক্ষম হন না, সেক্ষেত্রে তাকে কৃত্রিমভাবে করা একটি ছিদ্র যার নাম স্টমা যেটি গলার নীচে করা হয় তার সাহায্য নিতে হয়। স্বরযন্ত্র বাদ যাওয়ার কারণে রোগীরা (ল্যারিংজেক্টমিস) স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেন না, তাদের তখন বিশেষ স্বর ব্যবহার করে কথা বলতে শেখার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
পুনঃগঠনের প্রক্রিয়া. এইসব পরিবর্তন রোগীর জীবনধারায় অজস্র বড়সড় বদল আনে যার মধ্যে দিয়ে ল্যারিনজেক্টমিস বা রোগীদের যেতে হয়। এইসব পরিবর্তন মেনে নিয়ে এগিয়ে চলা রোগীদের জন্য একটি বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ যা সময়ের সঙ্গে হতাশার সৃষ্টি করতে পারে।
আলোচ্য বিষয়ে দ্য ল্যারিনজেক্টমি সোসাইটি যার সূচনা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে তা বড় ভূমিকা পালন করে চলেছে এইসব রোগীদের ব্যাপক পুনর্বাসন ও সহায়তাপ্রদানের ক্ষেত্রে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকা সেইসব চিকিৎসালয়ের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধাজনক যারা গলার ক্যানসারের রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করে থাকে। এই ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠান যে শুধুই রোগীদের সহায়তা প্রদান করে বা কথা বলা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাই নয়, তার রোগীদের শারীরিক, সামাজিক পুনর্বাসন, বৃত্তিমূলক সাহায্যদান ও মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্গঠনে সবরকম সহায়তা করে থাকে। এই ধরনের সোসাইটিতে রোগীরা নিয়মিত একে অপরের সাথে দেখা হওয়া কথা বলা মেলামেশার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে এক দৃঢ় সুসম্পর্ক গড়ে তোলে যা তাদের দুনিয়াকে মোকাবিলা করার শক্তি জোগায়।