ভারতীয়দের মধ্যে করোনারি ধমনী সংক্রান্ত রোগের হার বিশ্বের সর্বোচ্চ হারের মধ্যে একটি, সেইসাথে হৃদরোগে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর পঞ্চমাংশ ভারতেই ঘটে। উপরন্তু, ভারতীয়রা অন্যদের তুলনায় 3-20 গুণ বেশি হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাশ্চাত্যের জনসংখ্যা যেখানে 70 বছর বয়সের আগে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের কারণে 23 শতাংশ মৃত্যুর সাক্ষী, সেখানে এটির হার ভারতীয়দের মধ্যে 52 শতাংশ।
অন্যান্য জনসংখ্যার তুলনায় ভারতীয়রা 5-10 বছর আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। তরুণ ভারতীয়দের হার্ট অ্যাটাকের পিছনে অবদানকারী একটি কারণ হল জাঙ্ক ফুড খাবার অত্যাধিক প্রবণতা। কেন জানতে হলে পড়ুন…
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাক, যা মেডিকেল পরিভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নামে পরিচিত, তখনই ঘটে যখন রক্তের জমাট বাঁধা অংশ করোনারি ধমনীতে রক্তের প্রবাহকে বাধা দেয়। করোনারি ধমনীগুলি হল একপ্রকার রক্তনালী, যা হৃদপিন্ডের পেশীতে রক্ত সরবরাহ করে। হৃৎপিণ্ডের পেশীবহুল প্রাচীরে রক্ত প্রবাহে বাধার কারণে প্রাচীরের সেই অংশটি ‘ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস’ হয়ে যায় এবং রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয়।
কেন ভারতীয়রা বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে?
পরিবর্তিত জীবনধারা, শহরাঞ্চলে উচ্চ মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং অবশেষে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বহুসংখ্যক তরুণ ভারতীয়ের মধ্যে এই জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ রোগের আরেকটি প্রধান অবদানকারী হল আরামপ্রদ জীবনধারা।
উপরন্তু, তরুণদের সাধারণত ঝুঁকির কারণগুলোকে এড়িয়ে যাবার প্রবণতা থাকে। কখনও কখনও, রুটিন চেক-আপ উপেক্ষা করার ফলে অল্পবয়সীরা হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক সহ বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীও সতর্কতা চিহ্নগুলি সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। এই চিহ্নগুলির মধ্যে যেমন শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অযথা ক্লান্তি এবং শারীরিক ক্ষমতার অভাব, ঠান্ডা ঘাম হওয়া, বুকে চাপ, হাঁপানি বা এমনকি রাগের মতো মানসিক বিস্ফোরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি আছে।
এখন, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা 25 বছর বয়সী বা এমনকি সদ্য বয়ঃসন্ধিতে থাকা কিশোর-কিশোরীদের হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে দেখে আর অবাক হন না। ভারতে হার্ট অ্যাটাকের এক-চতুর্থাংশ ঘটনা 40 বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে হয়, এইভাবে উৎপাদনশীল কর্মশক্তির উপর একটি বড় চাপ সৃষ্টি করে কারণ “তরুণ” কর্মক্ষম জনসংখ্যা বর্তমানে একটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
হার্ট অ্যাটাকের জন্য কোন কারণগুলি অবদান রাখে?
ভারতীয়দের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের জন্য উচ্চ হারে অবদান রাখে এমন বিভিন্ন কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- গ্রামীণ এলাকার নগরায়ন
- গ্রামীণ জনসংখ্যার শহরাঞ্চলে বৃহৎ পরিসরে স্থানান্তর
- ব্যস্ত কাজের সময়সূচীর কারণে সবসময় শুয়ে-বসে থাকার মতো জীবনধারা বৃদ্ধি
- পেটের স্থূলতা (পেটের চর্বি)
- বিপাকীয় সিন্ড্রোম
- ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ
- ফল ও সবজি অপর্যাপ্ত মাত্রায় খাওয়া
- ফাস্ট ফুড সংস্কৃতির কারণে ভাজা, প্রক্রিয়াজাত এবং জাঙ্ক ফুডের ব্যবহার বেড়েছে
- তামাকের ব্যবহার বৃদ্ধি
- করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সচেতনতা নেই বা অল্প জ্ঞান আছে এবং নিয়ন্ত্রণও নেই
- কম এইচডিএল-কোলেস্টেরল (ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা)
- জিনগত প্রবণতা
কী কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?
হৃদরোগের বীজ বপন হয়ে যায় অল্প বয়সেই। তাইজন্য, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে, স্কুল এবং কলেজগুলিতে বিস্তৃত কার্ডিয়াক স্ক্রীনিং এবং স্বাস্থ্য প্রচারের প্রয়োজন আছে। জীবনধারা এবং হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা তা দেখার জন্য সরকারেরও সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করা উচিত। তরুণদের মধ্যে কার্ডিয়াক স্ক্রীনিংয়ে রক্তচাপ, পারিবারিক ইতিহাস, মানসিক চাপ-সম্পর্কিত সমস্যা, হৃদযন্ত্র-সম্পর্কিত লক্ষণ এবং অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলির পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
বর্তমানে পাশ্চাত্য জনসংখ্যার জন্য সুপারিশকৃত বিভিন্ন ঝুঁকির কারণগুলির চিকিৎসার অনুরূপ চিকিৎসা পেতে ভারতীয়দের নির্দিষ্ট নিম্ন কাট-অফ এবং কঠোর লক্ষ্যগুলির প্রয়োজন হবে, এটির একটি উদাহরণ স্থাপন করা হচ্ছে: বিএমআই (দেহ ভর সূচক) এর উচ্চ সীমা যা সিদ্ধান্ত নেয় যে একজন ব্যক্তিকে স্থূল বলে বিবেচনা করা হবে কিনা। এর মাপকাঠি এশিয়ানদের জন্য 25 থেকে 23-এ নামিয়ে আনা হয়েছে, কারণ তারা স্থূলতা এবং কার্ডিওপালমোনারি অ্যারেস্টের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কার্ডিওভাসকুলার রোগগুলি শুরু হওয়ার অনেক আগেই এটি প্রতিরোধ করার একটি কৌশল গ্রহণ করলে তা, রোগটি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, সেই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ প্রদানের চেয়ে কম ব্যয়বহুল এবং বেশি কার্যকর।