বাড়িHealth A-Zমেনোরেজিয়া: উপসর্গ, কারণ এবং ঋতুস্রাবের কষ্ট কমানোর পাঁচটি উপায়

মেনোরেজিয়া: উপসর্গ, কারণ এবং ঋতুস্রাবের কষ্ট কমানোর পাঁচটি উপায়

ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়াকে মেনোরেজিয়া বলে। ঋতুস্রাব 28 দিন অন্তর হয়। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং দিনে 2-3 বার প্যাড বদলাতে হয়। হরমোনের পরিবর্তনের মত বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে রক্তাল্পতা, ক্লান্তিভাব প্রভৃতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

উপসর্গ ও লক্ষণ

  • অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে স্যানিটারি প্যাড বারবার বদলাতে হয় [অনেক সময় ধরে প্রতি ঘন্টায় 1টি বা তার বেশী ট্যাম্পুন অথবা প্যাড লাগে]
  • 7 দিনের অধিক ঋতুস্রাব হওয়া।
  • ঋতুস্রাবের সময়  জমাট বাঁধা রক্ত নির্গত হওয়া।
  • রক্তপাতের কারণে সাধারণ কাজকর্ম করতে না পারা।
  • শ্বাসকষ্ট এবং ক্লান্তিভাব।
  • কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • ক্রমাগত তলপেটে ব্যথা হওয়া।

 মেনোরেজিয়ার কারণ

মেনোরেজিয়ার অনেকগুলি কারণের মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো জরায়ু এবং হরমোন সংক্রান্ত গোলযোগ। 

অন্যান্য কারণ হলো 

  • জরায়ুতে টিউমার যার সঙ্গে ক্যান্সারের কোনো যোগ নেই।
  • জরায়ু বা সার্ভিকাল ক্যান্সার।
  • অনুপযুক্ত গর্ভনিরোধক।
  • গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত সমস্যা — গর্ভপাত বা একটোপিক প্রেগনেন্সি অথবা যে পরিস্থিতিতে নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে প্রতিস্থাপিত হয়।
  • অনিয়মিত রক্তপাত।
  • কিডনি, লিভার বা থাইরয়েডের সমস্যা।
  • পেলভিক অংশে কোনো রোগ (প্রজনন তন্ত্রে সংক্রমণ)।
  • অ্যাসপিরিনের মতো ড্রাগ নেওয়া।
  • পেরিমেনোপজ — নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মেনোপজ হওয়া।
  • সন্তানের জন্ম দেওয়া।
  • গর্ভাশয়ের পেশিতে ফাইব্রয়েড ও পলিপের উপস্থিতি। 

মেনোরেজিয়া আছে এমন মহিলাদের ঋতুস্রাবের কষ্ট কম করার উপায়

1. মেন্সট্রুয়াল কাপ

মেন্সট্রুয়াল কাপ রক্তপাতের পরিমাণ কমায় না বরং এটি বারবার বাথরুমে যাওয়া থেকে বাঁচায়। 

এটি সিলিকন দিয়ে তৈরি। মেন্সট্রুয়াল কাপকে যোনিপথে প্রবেশ করালে এটি ঋতুস্রাবের রক্ত সংগ্রহ করে। এতে  কোনোরকম ব্যথা হয় না এবং এটি খুব সহজেই ফিট হয়ে যায়।

মেন্সট্রুয়াল কাপ যোনির পক্ষে অনুকূল এবং এটি যোনির আর্দ্রতা বজায় রাখে।

ট্যাম্পুন এবং প্যাড ব্যবহারের ফলে অস্বস্তি হয়। তাই মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের ফলে এই অস্বস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি 12 ঘন্টা অব্দি পরে থাকা যায়। কোনোরকম অস্বস্তি না হওয়ায় এটি পরে একজন মহিলা সব ধরনের কাজ করতে পারবেন। 

মেন্সট্রুয়াল কাপে কোনো প্রকার লিকেজ হয় না এবং এটি প্যাডের মতই কার্যকর। তা সত্ত্বেও কোনো কোনো মহিলার পক্ষে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা কষ্টকর। এটি ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে সমস্যা হতে পারে। 

2. হিটিং প্যাড

ঋতুস্রাবের সময় এই হিটিংপ্যাড ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হিটিং প্যাডের উষ্ণতা পেশীর জন্য আরামদায়ক।  হিটপ্যাড রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং তলপেটের ব্যথা কমায়। কোল্ড থেরাপিও এইভাবে কাজ করে। কোল্ড কম্প্রেসার টান বা ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। আপনার শরীরের জন্য যেটি উপযুক্ত আপনি সেটি ব্যবহার করতে পারেন।

3. কিছুক্ষণ অন্তর বিশ্রাম

ঋতুস্রাবের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম  শরীর এবং মন উভয়ের পক্ষে  আরামদায়ক। এটি রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।

4. ব্যায়াম এবং খাবার

যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যায়াম করার ফলে এন্ডোরফিনের মত ভালো হরমোন নিঃসৃত হয়, যা একজন ব্যক্তিকে আরাম দেয় ও ঋতুস্রাবের সময় পেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ঋতুস্রাবের ফলে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়ার পর ভিটামিন ডি ও আয়রন সাপ্লিমেন্ট এর পরিমাণ পুনরায় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মাছ থেকে পাওয়া ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ঋতুস্রাবের সময় প্রদাহ কমানোর জন্য পরিচিত। ঋতুস্রাবের সময় ক্যামোমিল  চা খেলে ব্যথা কমে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

1. মেনোরেজিয়া কতদিন থাকে

7 দিন স্বাভাবিক ঋতুস্রাব হওয়ার পর অতিরিক্ত রক্তপাত চলতে থাকাকে মেনোরেজিয়া বলে। রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর এর সময়কাল নির্ভর করে। 

2. কখন অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের জন্য আপনার হাসপাতালে যাওয়া উচিত?

যখন সব রকম সতর্কতা নেওয়া সত্ত্বেও উপসর্গ ক্রমাগত দেখা দেয়, তখন একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত এবং পেশাদারি সাহায্য নেওয়া উচিৎ।

মেনোরেজিয়ারোগ নির্ণয় করার জন্য নিম্নলিখিত মেডিক্যাল পরীক্ষাগুলির সুপারিশ করা হয়েছে:

  • পেলভিক পরীক্ষা: রক্ত পরীক্ষা করতে হবে থাইরয়েড এবং রক্তে লোহার পরিমাণ (অ্যানিমিয়ার জন্য)  জানতে এবং পরীক্ষা করতে হবে রক্ত জমাট বাঁধছে কিনা।
  • প্যাপ পরীক্ষা: শ্রোণীদেশের কোশ স্ক্যান করে দেখতে হবে কোনো প্রকার অস্বাভাবিকতা আছে কিনা।
  • এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি: এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি করতে হবে জরায়ুতে ক্যান্সার বা কোনো প্রকার অস্বাভাবিকতা আছে কিনা দেখার জন্য।
  • আল্ট্রাসাউন্ড: শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা, রক্তবাহ এবং দেহের কলাগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে কিনা দেখার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়।

অন্যান্য পরীক্ষাগুলি হল —

  • সোনোহাইস্টেরোগ্রাম: জরায়ুতে কোনো সমস্যা আছে কিনা দেখার জন্য এই পরীক্ষাটি করা হয়।
  • হিস্টিরোস্কপি: কোনো প্রকার ফাইব্রয়েড, পলিপ বা এ ধরনের কিছু আছে কিনা দেখার জন্য হিস্টিরোস্কপি করা হয়।
  • ডিলেশন  এবং কিউরেটাজ (“ডি এন্ড সি”): এটি একাধারে পরীক্ষা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি যা রক্তপাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরীক্ষায়  রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে তার জরায়ুর আস্তরণকে বাইরে বার করা হয় এবং এর পরীক্ষা করা হয়। 

3. মেনোরেজিয়ার চিকিৎসা কীভাবে করতে হবে?

সাধারণ পদ্ধতি গুলো হলো —

  • আয়রন সাপ্লিমেন্ট লোহার পরিমাণ বাড়ায় এবং এর ফলে অ্যানিমিয়া হয় না।
  • আইবুপ্রোফেন ব্যথা কমায় এবং রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • অনিয়মিত ঋতুস্রাবকে ঠিক করার জন্য জন্মনিরোধক ব্যবস্থা এবং ওষুধ, যোনির রিং অথবা প্যাচের মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ
  • আই ইউ ডি(ইন্ট্রাইউটেরাইন কন্ট্রাসেপশন)  ঋতুস্রাব নিয়মিত করে এবং  রক্তপাত কমায়।
  • হরমোন থেরাপি রক্তপাত কমায়। 
  • নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে রক্তপাতের সমস্যা থাকলে ডেসমোপ্রেসিন ন্যাসাল স্প্রে রক্তপাত কমাতে সাহায্য করে।
  •  অ্যান্টিফাইব্রিনোলাইটিক ওষুধ।
  • ডাইলেশন এবং কিউরেটাজ — এই প্রক্রিয়াতে অতিরিক্ত রক্তপাত কমানোর জন্য জরায়ুর উপরের আস্তরণ বাদ দেওয়া হয়।
  • অপারেটিভ হিস্টিরিওস্কপি — ফাইব্রয়েড, পলিপ এবং জরায়ুর আস্তরণ বাদ দেওয়া হয় এই প্রক্রিয়াতে।
  • এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাব্লেশন বা রিসেকশন — এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ বা আংশিক জরায়ুর আস্তরণ বাদ দেওয়া হয়।
  •  হিস্টিরেক্টমি — হল একটি পদ্ধতি যাতে অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে জরায়ুকে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে চিরস্থায়ী মেনোপজ দেখা দেয়। 

 উপসংহার

কতদিন মেনোরেজিয়া থাকবে তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি এবং এটি নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। যখন 7দিনের স্বাভাবিক ঋতুস্রাবের পরও অতিরিক্ত রক্তপাত হয় তখন অবশ্যই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে এবং পেশাদারি সাহায্য নিতে হবে। তিনি আপনাকে আপনার পূর্ববর্তী মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের ব্যাপারে,আপনার ঋতুস্রাবের ধরণ সম্পর্কে বিশদে জানতে চাইবেন এবং আপনাকে শ্রোণীদেশের কিছু পরীক্ষা অথবা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পরীক্ষা করতে দেবেন। ডাক্তার আপনার মানসিক চাপ, ঋতুস্রাবের সময় আপনার জীবনযাত্রা, ওজন সংক্রান্ত সমস্যা অথবা অন্তর্নিহিত রোগ (যদি থাকে) ইত্যাদির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন, যেহেতু এইগুলি আপনার রোগের কারণ এবং চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Avatar
Verified By Apollo Gynecologist
The content is verified by our experienced Gynecologists who also regularly review the content to help ensure that the information you receive is accurate, evidence based and reliable
Quick Appointment
Most Popular

কলপোস্কোপির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী?

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন রিং কি পৌরুষত্বহীনতার চিকিৎসা করতে পারে?

হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটার জুতো বাছাই করার সময় চারটি দিক মনে রাখা উচিত

ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার লক্ষণসমূহ যেগুলি আপনার বিবেচনা করা উচিত

Quick Book

Request A Call Back

X