ব্রেন স্ট্রোক হল সেরিব্রোভাসকুলার (মস্তিষ্কের রক্তনালী সম্পর্কিত সমস্যা) এর কারণে স্নায়বিক ঘাটতির ঘটনা। দুই ধরনের স্ট্রোক এর ধরণ রয়েছে। এর একটিকে ইস্কেমিক স্ট্রোক বলা হয়, যা রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্তনালীর আংশিক বা সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে ঘটে, এর ফলে মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যায় বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলি (নিউরন) মারা যেতে থাকে এবং প্রতি ১ মিনিটে রক্ত সরবরাহের অভাবে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন কোষ মারা যায়। অন্য আরেক ধরনের স্ট্রোকটি হল হেমোরেজিক স্ট্রোক। এতে রক্তনালী ফেটে যায় যার ফলে মস্তিষ্কের কলাতে রক্ত চুঁইয়ে পড়তে থাকে। হেমোরেজিক স্ট্রোকের (75% বনাম 25%) থেকে ইস্কেমিক স্ট্রোক অনেক বেশি পরিচিত ঘটনা।
স্ট্রোক হওয়ার সাধারণ ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস মেলিটাস, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, সিগারেট ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপানীয় গ্রহণ এবং হৃদরোগ। অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বার্ধক্য, পুরুষ লিঙ্গ, আরাম আয়েশের জীবনযাপন এবং মানসিক চাপ। যদিও স্ট্রোক বেশিরভাগ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেই ঘটে, তবে আজকাল অল্পবয়সী ব্যক্তিদের মধ্যেও এটি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ মূলত মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ব্যস্ত জীবনযাত্রা। এর মধ্যে কিছুজনের অল্প বয়সে স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও থাকতে পারে।
স্ট্রোক সাধারণত শরীরের এক অর্ধেক অংশে হঠাৎ দুর্বলতা, কথা বলতে বা বোঝার অক্ষমতা, কথা বলতে জড়তা, সবজিনিস দুটো করে দেখা বা দৃষ্টিশক্তির অর্ধেক ম্লান হয়ে যাওয়া, হাঁটার সময় ভারসাম্যহীনতার মতো আকারে প্রকাশ পায়। এছাড়া এটি গুরুতর মাথাব্যথা এবং চেতনার স্তর হ্রাস হিসাবেও প্রকাশ করতে পারে। রোগ নির্ণয় মস্তিষ্কের একটি স্ক্যান দ্বারা করা হয়, যা সাধারণত সিটি স্ক্যান হয় এবং কিছু পরিস্থিতিতে এমআরআই প্রয়োজন হতে পারে।
যখন কারও শরীরে স্ট্রোক হয় তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ছুটে যাওয়া। এর কারণ ইস্কেমিক স্ট্রোকের একমাত্র অনুমোদিত থেরাপি হল উপসর্গের সূত্রপাত হওয়ার প্রথম ৪.৫ ঘন্টার মধ্যে ক্লস্ট বার্স্টিং ড্রাগ rtPA (রিকম্বিন্যান্ট টিস্যু প্লাজমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর) এর শিরায় ব্যবহার করা। এমনকি এই সময়ের মধ্যে বা তারও আগে এই ওষুধ প্রাপ্ত রোগীরা পরবর্তী কিছুটা পরে প্রাপ্ত রোগীদের তুলনায় অনেক ভাল ফলাফল পান। প্রথম কয়েক ঘণ্টার পরে আমরা শুধুমাত্র অ্যাসপিরিন এবং ক্লোপিডোগ্রেলের মতো রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ট্রোক প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতে পারি। কিছু পরিস্থিতিতে ওয়ারফারিনের মতো অ্যান্টিকোয়াগুলেন্টের প্রয়োজন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মতো ঝুঁকির কারণগুলি এড়াতে প্রয়োজনীয় আঁশজাতীয় খাবার এবং কম কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং ওষুধ খান। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করে স্টোক হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করাই হল সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত।