বাড়িHealth A-Zহাঁটুর লিগামেন্টে আঘাত-

হাঁটুর লিগামেন্টে আঘাত-

হাঁটুর লিগামেন্ট বা অস্থিসন্ধি জখমপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ, উপসর্গসমূহ, নির্ণয় করার উপায় এবং তার চিকিৎসা-

    হাঁটুর লিগামেন্টে চোট পাওয়া খেলোয়ার এবং পরিশ্রমী মানুষদের জন্য খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। আসলে, যে কোনো মানুষই যে কোনো সময় হাঁটুর লিগামেন্টে চোট পেতে পারেন। 

লিগামেন্ট আসলে কী? 

লিগামেন্ট বা অস্থিসন্ধি আসলে হল ফিতার মত শক্ত সংযোজক কলা যেগুলি শরীরের  সন্ধিস্থলগুলিতে একটি অস্থির সঙ্গে অপর অস্থির সংযোগ সাধন করে। হাঁটুতে চারটি লিগামেন্ট থাকে যেগুলি ফিমার অথবা ঊরুর অস্থির সঙ্গে পায়ের অস্থিগুলিকে জুড়ে রাখে, যেগুলির নাম যথাক্রমে টিবিয়া বা জঙ্ঘাস্থি এবং স্লেন্ডার ফিবুলা বা বহিঃ অস্থি। লিগামেন্ট নড়াচড়া করার সময় অস্থির সন্ধিস্থল স্থির রাখতে সাহায্য করে যার ফলে আমাদের শরীরের অস্থিসমূহ নিজেদের জায়গায় বহাল থাকে। 

মচকে যাওয়া একটি লিগামেন্ট বলতে আসলে বোঝায় এমন একটি লিগামেন্ট যেটি আংশিকভাবে ছিঁড়ে গেছে অথবা যেটির অস্বাভাবিক সম্প্রসারণ ঘটেছে। একটি সম্পূর্ণ ছিন্ন লিগামেন্টের অর্থ যেটি দুটি অংশে ভাগ হয়ে ছিঁড়ে গেছে। 

 হাঁটুর লিগামেন্টগুলি হল-

আমাদের হাঁটুতে চারটি লিগামেন্ট থাকে এবং প্রত্যেকটি লিগামেন্ট আমাদের চলাফেরায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

  • ইন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট(এসিএল)- এটি উরুসন্ধি ও পায়ের অস্থিগুলির মধ্যে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। হাঁটুর লিগামেন্টের ক্ষেত্রে এই লিগামেন্ট সাধারণত সবচেয়ে বেশি জখমপ্রাপ্ত হয়। 
  • প্রস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট ইনজুরি(পিসিএল)- এটিও আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে(যদিও ক্রুসিয়েট এর মানে হয় ইংরাজির এক্স বর্ণের আকারে) এবং একটি লিগামেন্ট মধ্যাংশে অপরটির উপরে চেপে থাকে যখন এরা একে অপরকে অতিক্রম করে।
  • মেডিয়াল কলাটেরাল লিগামেন্ট(এমসিএল)-  এটি হাঁটুর মধ্যে উলম্বভাবে অবস্থান করে এবং হাঁটুর বাইরের অংশকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। 
  • ল্যাটেরাল কলাটেরাল লিগামেন্ট(এলসিএল)- এটিও উলম্বভাবে হাঁটুর বহিঃ অস্থিসন্ধিতে অবস্থান করে এবং হাঁটুর অভ্যন্তরীণ অংশকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। হাঁটু যাতে খুব বেশিমাত্রায় পাশাপাশি নড়াচড়া করতে না পারে সেটাও এই লিগামেন্টের কাজ বলা যায়। 

 হাঁটুর লিগামেন্ট চোট পাওয়ার কারণসমূহ 

যখন আমরা কোনো পরিশ্রমসাধ্য কাজ হঠাৎ করে কোনো প্রস্তুতি বা ওয়ার্ম আপ ছাড়াই শুরু করে দিই তখন আমাদের লিগামেন্টের চোট পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে বিশেষ করে শারীরিকভাবে অপটু মানুষদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা আরো বেশি থাকে। এসিএল নামক লিগামেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি। অর্ধেকেরও বেশি সময় একটি লিগামেন্টে চোট পাওয়ার সঙ্গে অপর লিগামেন্টেরও ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। খেলোয়ারগণ যারা ফুটবল, সসার, বাস্কেটবল অথবা টেনিস খেলার সঙ্গে যুক্ত তারা খেলোয়ার জীবনের কোনো না কোনো সময় এসিএল লিগামেন্টে জখমপ্রাপ্ত হন। যারা স্কি অথবা জিমনাস্টিক করেন তাদের ক্ষেত্রেও এ আশঙ্কা থেকেই যায়। 

সচরাচর পায়ের পাতা মাটিতে থাকা অবস্থায় পা হঠাৎ করে সম্প্রসারণ করে ফেলার কারণে লিগামেন্টে চোট লাগে। হাঁটুতে হঠাৎ বেশ জোরে ধাক্কা লাগলে যেমন বাড়ির মধ্যে হাঁটতে গিয়ে  অনেক সময় আসবাবপত্রে হাঁটু ধাক্কা খেলেও হাঁটুর লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

হাঁটুর লিগামেন্টে আঘাতের উপসর্গসমূহ

এসিএলে আঘাত পাওয়ার পরেও যন্ত্রণা হবেই এমন কোনো মানে নেই। আঘাত পাওয়ার সময়ে কট্ বা পট্ করে কোনো আওয়াজ হতে পারে। হাঁটুতে হঠাৎ যন্ত্রণা অনুভব করা। হাঁটুর আঘাত পাওয়া জায়গায় অল্প ছোঁয়ার পর যন্ত্রণা বুঝতে পারা। আঘাতপ্রাপ্ত হাঁটু ফুলে ওঠা, পরবর্তীতে আহত স্থানটিতে কালশিটা দেখা দেওয়া ।

শরীরের ভার আহত হাঁটুর উপরে পড়লে যন্ত্রণার উদ্রেক করে। আহত অবস্থায় আপনাকে কারো সাহায্য নেওয়া উচিত একটি গাড়ি ধরা অথবা নিকটবর্তী চিকিৎসালয়ে যাওয়ার জন্য। সেই মুহূর্তে হাঁটা খুবই কষ্টকর হতে পারে। চোটের ফলে হাঁটুর ভিতরে তরল নিঃসরণের ফলে হাঁটুর সন্ধিস্থল ফুলে যেতে পারে। 

হাঁটুর লিগামেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের উপায়

হাঁটুর এক্স-রে অথবা অ্যান্টেরো-পোস্টেরিয়র(এপি) এবং পার্শ্বগতভাবে পর্যবেক্ষণ দ্বারা অনুধাবন করা উচিত। এছাড়া এ বিষয়ে জানার জন্য আপনার ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটুর অস্থিসন্ধির ইউএসজি, সিটিস্ক্যান অথবা এমআরআই করাতে বলা হতে পারে। আপনাকে একটি অ্যানথ্রস্কোপি করাতে বলা হতে পারে যে প্রক্রিয়ায় ডাক্তার অ্যানথ্রস্কোপ নামক যন্ত্র দ্বারা আপনার হাঁটুর অস্থিসন্ধি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং যন্ত্রটি সে সময় আপনার হাঁটুতে ঢোকানো থাকবে। 

হাঁটুর লিগামেন্ট আঘাতের চিকিৎসা

আংশিক ছিঁড়ে যাওয়া লিগামেন্ট বা লিগামেন্টে অল্প আঘাত নিজের থেকেই সেরে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট(এসিএল) বা প্রস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট ইনজুরি(পিসিএল) আঘাতপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনার সার্জারি করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

প্রচলিত চিকিৎসা

হাঁটুর লিগামেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শগুলি মেনে চলা প্রয়োজন। 

আপনার বিশ্রাম নেওয়া দরকার এবং আঘাতপ্রাপ্ত হাঁটুটি সর্বদা উঁচু করে রাখা উচিত, হাঁটাচলা যতটা সম্ভব কম করবেন এবং প্রত্যেক চার ঘন্টায়  দশ থেকে তেরো মিনিট ধরে ওই হাঁটুতে বরফ দেওয়া প্রয়োজন অন্তঃ আঘাত পাওয়ার পরে প্রথম দুদিন ধরে। বরফ ফোলা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বরফ না থাকলে এক প্যাকেট জমানো মটর ব্যবহার করা যেতে পারে। 

পেইনকিলার- অসহ্য যন্ত্রণা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা এনএসএইডের ব্যবহার করা যেতে পারে।  

প্রদাহ কমামোর জন্য  ডাইক্লোফেনাক জাতীয় জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই সমস্ত কিছুই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে করবেন। 

৪৮ ঘন্টা পর গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটুতে একটি তোয়ালে গরম করে অথবা গরম জলের ব্যাগ ব্যবহার করে সেঁক নেওয়া যেতে পারে। 

আপনার ডাক্তার  ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটুতে ব্যান্ডেজ করে দিতে পারেন ফোলা কমাতে বা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটিকে আরাম দেওয়ার জন্য। তবে সেটা নির্ভর করছে আঘাত কতটা তার উপর। 

সার্জারি-

আপনার সার্জারির প্রয়োজন আছে কিনা তা কিছু জিনিসের উপর নির্ভর করছে। সেগুলি হল- 

  • আপনি যদি খেলাধুলার সঙ্গে  যুক্ত হন সেক্ষেত্রে আপনার লাইফস্টাইলে অতিমাত্রায় শারীরিক কার্যকলাপের ভূমিকা আছে। 
  • আপনার বয়স। 
  • আপনার চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা যথা অপরিমিত সুগার, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির গোলযোগ অথবা ক্রনিক রোগসমূহ আছে কিনা। 
  • আপনার যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা। 

ছিঁড়ে যাওয়া একটি এসিএল অথবা পিসিএল পুনঃগঠন করা প্রয়োজন। এটি সেলাই করে সারানো সম্ভব নয়। পুনঃগঠনের মানে হল আপনার শরীরের অন্য কোনো অংশের থেকে কন্ডরা নিয়ে  অথবা অন্য কোনো মৃতদেহ থেকে অংশ নিয়ে সেটিকে সারানো। হাঁটুর লিগামেন্টের চোট সারতে কয়েক মাস সময় লাগে, এটি ধীরগতিতে সারে এমনকি সার্জারি করলে অথবা না করলেও। 

ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটু যতটা সম্ভব কম ব্যবহারের চেষ্টা করুন কারণ যত কম ব্যবহার করা হয় তত তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে ও বেশি ব্যবহারে সেরে ওঠার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। 

হাঁটুর লিগামেন্ট চোট পাওয়া রোধ করার উপায়-

  • অভ্যাস না থাকলে এবং শারীরিক প্রস্তুতি না নিয়ে হঠাৎ করে ভারি ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। 
  • হঠাৎ করে হাঁটুর উপর শরীরের সমস্ত ভার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং পায়ের পাতা মাটিতে থাকাকালীন আচমকা শরীর এমনভাবে বেঁকানো উচিত নয় যাতে হাঁটুতে চাপ পড়ে। 
  • হাঁটুর সুরক্ষার জন্য বন্ধনী ব্যবহার করা উচিত যাতে আগে আঘাত পাওয়া হাঁটু পুনরায় চোট না পায়। 
  • ঘরে হঠাৎ করে হাঁটু কোনো আসবাবপত্রে যাতে ধাক্কা না খায় তাই সতর্ক হয়ে চলাফেরা করা প্রয়োজন।  
Avatar
Verified By Apollo General Physician

Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience

Quick Appointment
Most Popular

কলপোস্কোপির সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী?

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন রিং কি পৌরুষত্বহীনতার চিকিৎসা করতে পারে?

হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটার জুতো বাছাই করার সময় চারটি দিক মনে রাখা উচিত

ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার লক্ষণসমূহ যেগুলি আপনার বিবেচনা করা উচিত

Quick Book

Request A Call Back

X